কোন পক্ষে নির্দল, প্রশ্ন জিইয়ে ভোট

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার হাদিপুর-ঝিকরা গ্রাম পঞ্চায়েতে গতবারে নির্দল থেকে জিতে তৃণমূলে যোগ দেন আব্দুল হাকিম। শাসক দলের প্রতীকে এ বার প্রার্থী তিনি। তাঁর ভাইপো আরিফ বিল্লা দাঁড়িয়েছেন সিপিএম থেকে। বিজেপি প্রার্থী দেয়নি। নির্দল থেকে দাঁড়িয়েছেন কামালউদ্দিন মণ্ডল।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

কে আসল?

Advertisement

সন্ধে ৭টা। তিন প্রান্তে চলছে তিন দলের পথসভা। বটগাছের তলায় তৃণমূল প্রার্থী বক্তব্য রাখছেন, ‘‘আসল তৃণমূল আমিই। দল কাকে প্রতীক দিয়েছে? আমাকেই তো!’’ আর এক প্রান্তে তাঁরই ভাইপো, সিপিএম প্রার্থী বলছেন, ‘‘কাকা নয়, খাঁটি তৃণমূল তো আমিই।’’ তৃতীয় পথসভায় নির্দল প্রার্থীরও দাবি, ‘‘ওরা নয়, আসল তৃণমূল কে আপনারা তো জানেন, আমিই।’’

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার হাদিপুর-ঝিকরা গ্রাম পঞ্চায়েতে গতবারে নির্দল থেকে জিতে তৃণমূলে যোগ দেন আব্দুল হাকিম। শাসক দলের প্রতীকে এ বার প্রার্থী তিনি। তাঁর ভাইপো আরিফ বিল্লা দাঁড়িয়েছেন সিপিএম থেকে। বিজেপি প্রার্থী দেয়নি। নির্দল থেকে দাঁড়িয়েছেন কামালউদ্দিন মণ্ডল। তিন জনেরই দাবি, আগ মার্কা তৃণমূল তিনিই। আরিফ এবং কামালউদ্দিনের আবার যুক্তি, ‘‘দলের বিরুদ্ধে তো লড়ছি না। প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। দল চাইলে জেতার পরে তৃণমূলেই যোগ দেব।’’ একদা বাম অধ্যুষিত এই জেলায় গত প়ঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিল বামেরাই। জেলা পরিষদে ৫৭টি আসনে তারা দখলে নেয় ২০টির। এ বার নির্বাচনে বিজেপি বেশ কিছু জায়গায় থাবা বসানোয় বিরোধী ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া তৃণমূল শিবিরে। কিন্তু সেই স্বস্তির আকাশেও কালবৈশাখী মেঘের আভাস। ভোটের পূর্বাভাসই জানিয়ে দিয়েছে, এই নির্বাচনে তৃণমূলের টক্কর তৃণমূলের সঙ্গেই।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, ইতিমধ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট ৪২৯৬টি আসনের মধ্যে ১১৫৮টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল (আদালতে তার কী ফয়সালা হয়, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে)। কিন্তু পাটিগণিত বলছে, ব্যাকফুটে থাকলেও জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে প্রচুর পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি বিরোধীদের এখনও রয়েছে। সেই সম্ভাবনার সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কে বিরোধীদের অক্সিজেন যুগিয়েছে তৃণমূলে টিকিট না পাওয়া ১২২৫ জন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী।

ঘাসফুলে কাঁটা

• জেলা পরিষদের নির্দল প্রার্থী ১০ জন।

• পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল প্রার্থী ১৬৫ জন।

• গ্রাম পঞ্চয়েতে নির্দল প্রার্থী ১০৫০ জন।

(নির্দল প্রার্থীদের বড় অংশই শাসকদলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর।)

• গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৫৬০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৯৮৫টি আসনে।

• পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৮৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ১৬৪টি আসেন।

• জেলা পরিষদের ৫৭টি আসনের মধ্যে ৯টি।


ছাই চাপা এই বারুদে আগুনের ফুলকি ধরাতে জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। গতবার প়ঞ্চায়েত ভোটে যিনি ছিলেন তৃণমূলের কাণ্ডারী। জেলায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতির কথাই উঠে আসছে বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্যে। তবে ধারে-ভারে কেউই কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে দাবি করছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর কথায়, ‘‘কন্যাশ্রী, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নই আমাদের হাতিয়ার।’’ক্ষমতার লড়াইয়ে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমনই জায়গায় চলে গিয়েছে, যে ইতিমধ্যেই মনোনয়ন ঘিরে তৃণমূলের তিন নেতা-কর্মী খুন হয়ে গিয়েছেন শাসন, আমডাঙায়। খুন, পাল্টা খুনের অভিযোগে উঠে এসেছে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গই। গোষ্ঠী কোন্দল থাবা বসিয়েছে ঘরের অন্দরেও। এক পরিবারের ঘাসফুল চিহ্নে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য প্রতীকে কিংবা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজের আত্মীয়ই। দাদার বিরুদ্ধে ভাই, শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে বৌমা, কাকার বিরুদ্ধে ভাইপো— বনগাঁ, বসিরহাট, দেগঙ্গা, আমডাঙা জুড়ে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement