পিছনে যৌনকর্মীকে বসিয়ে চলে বাইক পাচার

ফন্দি-ফিকির অনেক রকম। যৌনপল্লির মহিলাকে সাজিয়ে-গুজিয়ে বসানো হতো বাইকের পিছনে। যেন সঙ্গে আছে স্ত্রী। সেই বাইকই সাঁ সাঁ করে ছুটত সীমান্তের দিকে। সুযোগ বুঝে সেই বাইকই হাত ঘুরে পৌঁছে যেত পড়শি দেশে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
Share:

ফন্দি-ফিকির অনেক রকম। যৌনপল্লির মহিলাকে সাজিয়ে-গুজিয়ে বসানো হতো বাইকের পিছনে। যেন সঙ্গে আছে স্ত্রী। সেই বাইকই সাঁ সাঁ করে ছুটত সীমান্তের দিকে। সুযোগ বুঝে সেই বাইকই হাত ঘুরে পৌঁছে যেত পড়শি দেশে।

Advertisement

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাইক পাচার চক্রের এক পান্ডাকে গ্রেফতার করে এমনই নানা তথ্য আসছে পুলিশের সামনে। কিন্তু মহিলাকে বাইকে বসানোর সুবিধা কী? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বাইকের পিছনে মহিলা থাকলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তেমন পড়তে হয় না। বিএসএফও অনেক সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার মনে করে না। ‘সপরিবার সফর’-এর আড়ালে পাচার হয়ে যায় মোটরবাইক।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গাইঘাটা থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সবাইপুর মোড় এলাকা থেকে ওই পাচারকারীকে ধরে। সমীর বিশ্বাস নামে বছর সাতাশের ওই যুবকের বাড়ি সবাইপুর মাঠপাড়া এলাকায়। তার কাছ থেকে একটি চোরাই মোটর বাইক, ২৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। সমীরকে জেরা করে বাইক পাচার নিয়ে নানা তথ্য আলছে পুলিশের সামনে। বাইকের পিছনে মহিলাকে বসিয়ে পাচারের কৌশল অবশ্য আগেও অজানা ছিল না পুলিশের। নতুন করে সে সব প্রমাণই সমীরকে জেরা করে মিলবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

শুক্রবার বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক সমীরকে ৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘ধৃতকে জেরা করে পুলিশ বাইক চুরি থেকে পাচার চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। শীঘ্রই বাকিদের গ্রেফতার করা হবে।’’ সমীরকে ধরার অপারেশন চালিয়েছেন গাইঘাটার ওসি অনুপম চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, বছর সাতেক আগে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি সমীরের। প্রথমে ডাকাতি ও চুরি করত। আগে স্বরূপনগর এবং গাইঘাটা থানা এলাকায় ডাকাতির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। পরে সীমান্ত দিয়ে বাইক পাচার শুরু করে সমীর। ইদানীং মাদক পাচারেও জড়িয়েছিল সে।

সমীরকে জেরা করে পুলিশের দাবি, কলকাতা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটর বাইক চুরি করে দুষ্কৃতীরা সমীরের কাছে ওই বাইক পৌঁছে দিত। সুযোগ বুঝে বসিরহাট ও বনগাঁর বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে সে বাংলাদেশি পাচারকারীদের হাতে বাইক পৌঁছে দিত। এ দেশে বাইকের যা দাম, তার দ্বিগুণ দাম মেলে বাংলাদেশে। চুরি হওয়ার পরে বিভিন্ন হাত ঘুরে চোরাই বাইক পৌঁছত সমীরদের কাছে। কী ভাবে পাচার হয় বাইক?

পুলিশ ও বিএসএফের গতিবিধি দেখার জন্য সমীরের নিজস্ব লোকজন ছিল। সীমান্তে পাহারা তুলনায় কম থাকলে সে খবর পৌঁছত সমীরের কাছে। সে সময়ে বাইক নৌকোয় তুলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে পাচার হতো। কখনও বাইকের সমস্ত কলকব্জা খুলে বস্তায় ভরে তা-ও পাঠানো হতো সীমান্তের ও পারে। পাটের ফলনের সময়ে সীমান্ত-লাগোয়া খেতে চুরি করা বাইক লুকিয়ে রাখা হয়। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে বাইক পাচার করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, নদীতে কচুরিপানা থাকলে বাইকের যন্ত্রাংশ খুলে কচুরিপানার তলায় লুকিয়ে রাখা হয়। যাতে জল না ঢোকে সে জন্য প্যাকিং করা হয় উপযুক্ত ভাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন