হেলমেট পরা দরকার, বলল পুলিশ

এ দিন নাহাটা থেকে গোপালনগর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথে বাইক র‌্যালি বেরোয়। সেখানে কলেজ পড়ুয়া, পুলিশ কর্মী মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন যোগ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫২
Share:

সদ্য বিবাহিত এক যুবক স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাবে বলে তৈরি হচ্ছিলেন। যাবেন বাইকে। গাড়ি স্টার্ট করতে যাবেন, বাবা-মা দেখলেন, ছেলের কানে হেডফোন। বাবা সেটি খুলে দিলেন। খানিক বিরক্ত সদ্য যুবকটি। মা ছেলেকে অনুরোধ করলেন, ‘‘হেলমেট পরে যা বাবা।’’ স্ত্রীর মাথাও খালি। নতুন বৌমাকে শাশুড়ি অনুরোধ করলেন, ‘‘হেলমেট পরে নাও।’’ বৌমা কাঁধ ঝাঁকিয়ে জবাব দিলেন, ‘‘সবে চুলে শ্যাম্পু করেছি মা। এখন হেলমেট পরলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।’’ ছেলের জবাব, ‘‘এই তো এখান থেকে এখানে যাব। হেলমেট-ফেলমেট লাগবে না মা।’’ পথে পুলিশ-টুলিশ থাকলে... মায়ের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই জবাব মিলল, ‘‘ও সব ম্যানেজ করে নেব।’’

Advertisement

হেলমেট না পরেই স্ত্রীকে বাইকে পিছনে বেরিয়ে গেলেন যুবক।

কিছুক্ষণ পরেই থানা থেকে ফোন এল বাড়িতে। পড়িমড়ি হাসপাতালে গিয়ে বাবা-মা দেখলেন, ছেলে-বৌমার নিথর দেহ। বালি-বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনেরই।

Advertisement

বৃদ্ধা বাবা প্রতিজ্ঞা করেন, পেনশনের টাকা দিয়ে তিনি হেলমেট কিনে বাইক চালকদের মধ্যে বিলি করবেন।

সত্যি ঘটনা নয়। নাটক। কিন্তু সত্যির থেকে খুব দূরেও নয়।

এই নাটক এবং আদিবাসী নৃত্যের মাধ্যমে কলেজ পড়ুয়া বাইক চালকদের হেলমেট নিয়ে সচেতন করল পুলিশ। গোপালনগর থানা ও স্থানীয় নহাটা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শুক্রবার যৌথ ভাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ভাবেই পালিয় হল ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি।

কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে কেন এমন পদক্ষেপ?

বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় জানান, দেখা গিয়েছে, যুবকদের মধ্যে, বিশেষ করে কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে হেলমেট না পরার প্রবণতা বেশি। প্রায়শই আইন ভাঙেন সদ্য তরুণেরা। তাই কলেজ পড়ুয়াদের হেলমেট পরা নিয়ে সচেতন করতে এই প্রয়াস।

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধাপে ধাপে বনগাঁ মহকুমার প্রতিটি কলেজে পড়ুয়াদের সচেতন করতে একই রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এ দিন নাহাটা থেকে গোপালনগর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথে বাইক র‌্যালি বেরোয়। সেখানে কলেজ পড়ুয়া, পুলিশ কর্মী মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন যোগ দেন। সকলের মাথায় ছিল হেলমেট। র‌্যালির সূচনা করেন অনিলবাবু, বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস ও বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। হেলমেট সম্পর্কে কলেজ পড়ুয়াদের সচেতন করেন সকলেই।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন রাহা বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বলেছি, তাঁরা যেন বাইক চালানোর সময়ে হেলমেট পরে সকলের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেন। পরিচিতদেরও এ বিষয়ে সচেতন করেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন