চার পঞ্চায়েত ‘পাখির চোখ’ দু’পক্ষের

দু’জনেরই পছন্দ সাদা পোশাক, সাদা গাড়ি, মধ্যাহ্নভোজে ডাল-ভাত, চচ্চড়ি। দু’জনেই সাদামাঠা।গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে দু’জনেই চাষির বাড়ির মাটির দাওয়ায় বসে পড়েন নির্দ্বিধায়। জল চেয়ে খান। মেঠো ভাষায় ভোটারের মন জয়ের চেষ্টা করেন। আরও মিল— দু’পক্ষই ‘পাখির চোখ’ করেছে এলাকার চার পঞ্চায়েতকে!

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫৩
Share:

দু’জনেরই পছন্দ সাদা পোশাক, সাদা গাড়ি, মধ্যাহ্নভোজে ডাল-ভাত, চচ্চড়ি। দু’জনেই সাদামাঠা।

Advertisement

গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে দু’জনেই চাষির বাড়ির মাটির দাওয়ায় বসে পড়েন নির্দ্বিধায়। জল চেয়ে খান। মেঠো ভাষায় ভোটারের মন জয়ের চেষ্টা করেন। আরও মিল— দু’পক্ষই ‘পাখির চোখ’ করেছে এলাকার চার পঞ্চায়েতকে! জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রের ভাটপাড়া পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ড বাদ দিলে মোট ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ভোটারের আশি শতাংশই এই চার পঞ্চায়েতের বাসিন্দা যে!

তাই কাউগাছি-১ ও ২, পানপুর-কেউটিয়া এবং মামুদপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এই গরমেও সকাল-বিকেল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঢুঁ মারছেন তৃণমূল প্রার্থী পরশ দত্ত এবং তাঁর প্রতিপক্ষ জোটের প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের হরিপদ বিশ্বাস। পরশবাবুর লড়াই আসন ধরে রাখার। হরিপদবাবুর লড়াই জয়ে ফেরার। গতবার হরিপদবাবুকে ৩৬ হাজার ৩২ ভোটে হারিয়েই এখান থেকে বিধায়ক হন পরশবাবু।

Advertisement

কিন্তু এ বার যে লড়াই কঠিন তা মানছেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরাই। কেননা, একে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিরোধী জোট, তার উপরে সারদা থেকে নারদ, উড়ালপুল বিপর্যয় এবং শেষে সিন্ডিকেট যোগ সামনে আসায় দলে অস্বস্তি। প্রার্থী পরশবাবু কর্মী-সমর্থকদের অনেকের কাছেই ‘পরিযায়ী পাখি’। কেননা, তিনি লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা। গত বার বিধায়ক হওয়ার পরেও এলাকায় তাঁকে বেশি পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগও রয়েছে। রয়েছে দলের গোষ্ঠী-কোন্দলও। এ সব এড়ানো কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। কেননা, মিটিং-মিছিলে তেমন লোক হচ্ছে না।

ভোট এগিয়ে আসায় পরশবাবু এখন অবশ্য জগদ্দলেই থাকছেন। কিন্তু প্রচারে বেরিয়ে পরশবাবু নিজের কথা বলছেন কম। বারবার তুলছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই। তিনি বলেন, ‘‘আমি কিছু নই।ওঁর উন্নয়নের গতি বজায় রাখতে ভোটটা ওঁকেই দেবেন আপনারা।’’

পরশবাবুকে জেতাতে ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধেছেন ভাটপাড়ার তৃণমূল প্রার্থী অর্জুন সিংহ। পরশবাবুর হয়ে প্রচারেও যাচ্ছেন। অর্জুনবাবুর দাবি, ‘‘আমার এলাকা নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু দলের স্বার্থেই পরশদার হয়ে পথে নেমেছি। ওঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যে আমাদের পুরসভার কিছু অংশ তো রয়েছেই। তাই।’’

কিন্তু রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এ বার সমীকরণ অনেক বদলে যেতে পারে। গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে জগদ্দলে শাসক দলের ভোট ছিল ৬৮হাজার ৮৭৩টি। বামেরা পেয়েছিল ৪৪ হাজার ৯৩টি ভোট আর কংগ্রেস পেয়েছিল ৪হাজার ৬০৪টি ভোট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল পায় ৮৬ হাজার ৩৮৮ ভোট। বামেদের ঝুলিতে যায় ৫০ হাজার ৩৫৬ ভোট। কংগ্রেসের দাবি, সে বার জোটের ৩০ শতাংশ ভোটই তাদের ছিল। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, ওই দু’টি নির্বাচনের ফল নিয়ে তৃণমূল আত্মতুষ্টিতে ভুগলে ভুল করবে।

সমীকরণ বদলাতে তাই উঠেপড়ে লেগেছে বিরোধী জোট। মাসখানেক ধরেই জোরকদমে এক সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারটি পঞ্চায়েত এবং পুরসভার বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল চলছে। হরিপদবাবুর ‘অ্যাডভান্টেজ’ তিনি দীর্ঘদিন জগদ্দলের বাসিন্দা। গলিঘুঁজিও চেনেন হাতের তালুর মতো। তার উপরে ১৯৯৮ থেকে পর পর তিন বার এখানকার বিধায়ক হয়েছেন। দলের প্রতীক ‘সিংহ’ এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। গত বিধানসভা ভোটে হারার পরে নিজেকে কার্যত গুটিয়ে নিলেও এ বার প্রথম থেকেই ময়দানে। নিজের হাতে দেওয়ালও লিখেছেন। প্রচারে বেরিয়ে প্রতিপক্ষের মতো তাঁর মুখেও উন্নয়নের কথা। তিনি বলেন, ‘‘মাঝে অনেকটা কাজ থমকে গিয়েছিল। জিতলে আবার শূন্য থেকে শুরু করব।’’

নিজেদের এই লড়াইয়ে দু’পক্ষ অবশ্য নজর রাখছে তৃতীয় পক্ষ বিজেপি-র দিকেও। এর মধ্যে মাথাব্যথা বেশি তৃণমূলেরই। ‘মোদী-হাওয়া’ না থাকায় তাদের যেটুকু স্বস্তি ছিল, বিজেপি এলাকার ‘ভূমিপুত্র’ অরুণ ব্রহ্মকে প্রার্থী করায় তা উবে গিয়েছে। কেননা, অরুণবাবু প্রাক্তন তৃণমূল নেতা। ২০১৩ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু পুরনো দলে এখনও তাঁর অনেক অনুগামী রয়ে গিয়েছে। ভোটের দিন তাঁরা কোন পক্ষ নেয়, সেই জল্পনাও তুঙ্গে উঠেছে শাসক দলের অন্দরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন