আজ থাকছেন বিশ্বনাথ বসু

পুজো শেষ, সঙ্গে প্রেমেরও দফারফা

ছোটবেলাটা কেটেছে গাঁ-গঞ্জে। পুজোর সময়ে কেউ সেই পুরনো পাড়ায় ফিরতে পারেন, কেউ পারেন না। সেলিব্রিটিদের ছেলেবেলার পুজোর আবেগ ছুঁয়ে দেখল আনন্দবাজার।পুজোর কিছু দিন আগে থেকে কিছুতেই পড়ায় মন বসত না। পুজোর চারটে দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকতাম। গোটা গ্রাম আলোর মালায় সেজে উঠত, কী যে ভাল লাগত!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৮
Share:

বাড়ির পুজোয় অনেক দায়িত্ব পল্টুর। নিজস্ব চিত্র।

পুজোর কিছু দিন আগে থেকে কিছুতেই পড়ায় মন বসত না। পুজোর চারটে দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকতাম। গোটা গ্রাম আলোর মালায় সেজে উঠত, কী যে ভাল লাগত! এ সব ভাবতে ভাবতে পুজোর বেশ কিছু দিন আগের থেকে বই মুখে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম। বকুনিও খেয়েছি কত এ সব পাগলামির জন্য।

Advertisement

অনেক ব্যস্ততা থাকলেও পুজোয় বাড়ি আসার চেষ্টা করি। এ বারও ষষ্ঠীর দিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বাড়িতে হাজির হব। গিয়েই শুরু হয়ে যাবে পুজোর কাজ। চারদিক থেকে হাঁকডাক শুনতে পাব, ‘পল্টু...পল্টু।’ এটাই তো আমার ডাকনাম। শহরে আর তেমন শুনতে পাই কই এই নাম।

বাড়িতে সে দিন সিঙারা-মিষ্টি আসে। সেটাই দস্তুর। খেতে খেতে দারুণ আড্ডা জমে। ভাইবোনদের নিয়ে গ্রামে ঘুরি। দুপুরে আমিষ ও নিরামিষ খাবারের আয়োজন হয়। আমি দু’রকমই খাই। খেতে বড্ড ভালবাসি। সেটা মনে হয় টেলিভিশনের পর্দায় বা সিনেমায় আমার চেহারা দেখে দর্শকেরাও বিলক্ষণ টের পান।

Advertisement

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বসিরহাটের আড়বালিয়া গ্রামে আমাদের বসু বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। গ্রামের নাগচৌধুরী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করার সুবাদে যৌতুক হিসাবে আড়বালিয়ায় সম্পত্তি পেয়েছিলেন সোনারপুরের সুভাষ গ্রামের আমাদের বসু পরিবার। ওই পরিবারের রাম বসু এখানে এক চালার দুর্গাপ্রতিমায় পুজোর সূচনা করেছিলেন। সে সময়ে পুজোর দিনগুলিতে যাত্রা-নাটক হতো। মেলা বসত। সে সব এখন শুধুই স্মৃতি।

শুনেছি, অনেক কাল বাড়িতে মহিষ বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এখন নেই। আমি এমনকী, আমার বাবাও কোনও দিন সে সব দেখিনি। কিন্তু যে খাঁড়া দিয়ে বলি দেওয়া হতো, সেটা আজও আছে। এখন ৭টি ছাগল ও ১টি ভেড়া বলি দেওয়া হয়। বলি দেখতে দূর দূর থেকে লোক আসে। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি পুজোর চার দিন কলকাতা থেকে আমাদের বহু আত্মীয়-স্বজনেরা আসেন। আসেন তাঁদের বন্ধু-বান্ধবেরাও।

ছোটবেলায় পুজো উপলক্ষে কতজনের সঙ্গে আলাপ হতো। আড্ডা জমত। আর হ্যাঁ, অস্বীকার করব না, প্রেমেও পড়েছি দু’একবার। কিন্তু পুজো শেষ তো প্রেমেরও দফারফা। অপেক্ষা করেছি পরের বছরে ফের একবারটি দেখব বলে। কিন্তু সেটা হয় তো শুধু অপেক্ষা হয়েই থেকে গিয়েছে।

বসু পরিবারের প্রতিমা শিল্পীকে পরিবারের সকলেই বড় খোকাদা বলে ডাকেন। বাপ-ঠাকুরর্দার আমল থেকেই খোকাদার বংশধরেরা আমাদের প্রতিমা গড়েন। পুরোহিত মধুসূধন চট্টোপাধ্যায় এই বাড়ির পুজো করেন। এক সময়ে গরুর গাড়িতে বড় বড় জালা ভর্তি করে ব্যারাকপুরের গঙ্গা থেকে জল আসত। এখনও এই নিয়ম মানা হয়। তবে গরুর গাড়ি বদলে রিকশা হয়েছে।

সপ্তমীতে কলাবৌ স্নান করানো নিয়ে খুব মাতামাতি হয়। দশমীর দিন আমাদের বাড়ির ঠাকুর ভাসান দেওয়ার জন্য অন্য গ্রাম থেকে পঁচিশ জন মানুষ আসেন। ধানের খেতের মাঝখান দিয়ে পর পর সাতটি প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়। সকলের প্রথমে আমাদের বাড়ির ঠাকুর থাকে। সে এক অন্য রকম দৃশ্য।

ইছামতীতে ভাসান দেওয়ার পরে চোখের জল আজও ধরে রাখতে পারি না। তবু মনে মনে বলি, এই দৃশ্য দেখার জন্য আরও একটা বছর বাঁচিয়ে রেখো মা!

—অনুলিখন: নির্মল বসু ও মৌ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন