উত্তেজনা: অবরোধ তোলার চেষ্টা পুলিশের। অশোকনগরে। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় দফায় দফায় রেল ও সড়ক অবরোধ, গোলমাল, পুলিশের লাঠিচার্জ, ওসিকে মারের ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মছলন্দপুর, গুমা, অশোকনগর, দত্তপুকুর এলাকা।
ইসলামপুরে গুলিতে দুই তরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে অবশ্য তেমন প্রভাব পড়েনি। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হলেও বাস, অটো, টোটো, ট্রেকার-সহ অন্য যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার খোলা ছিল। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল।
বন্ধের সমর্থনে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা বুধবার সকালে হাবড়ার মছলন্দপুরে রেল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। অবরোধ কিছুক্ষণ চলার পরে সেখানে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হয়। অবরোধকারীদের বেধড়ক পেটাতে থকে তারা। পাঁচ বিজেপি কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদারের অভিযোগ, ‘‘এক তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’
তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অজিত সাহা বলেন, ‘‘বিজেপির দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে এ দিন মারপিট হয়েছে। আমাদের লোকজন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল।’’
এ দিন সকালে অশোকনগরের গুমা স্টেশন এলাকায় রেল-সড়ক অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। অবরোধ তুলতে লেগে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি বাধে। পুলিশ অবরোধ তুলতে লেগে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশ লাঠি চালায়। অবরোধকারীরাও পাল্টা প্রতিরোধ করে। অশোকনগর থানার ওসি আশিস দলুই বন্ধ সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন, কেন পুলিশ বিজেপির অবরোধ তুলতে পারছিল না, এই ক্ষোভে তৃণমূলের লোকজন পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছিল। ওই ঘটনায় পুলিশ ৫ জন বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে। হামলার অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।
দত্তপুকুরের পিরগাছা মোড়ে টাকি সড়কে পথ অবরোধকারীদের তৃণমূলের লোকজন মেরে হটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বিজেপির এক মহিলা নেত্রীকে তৃণমূলের এক নেতা লাথি মারেন বলেও বিজেপির অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। সে কথাও মানতে চায়নি তৃণমূল।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল পৌনে ৭টা থেকে দফায় দফায় বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার বনগাঁ, ঠাকুরনগর, গুমা, অশোকনগর, মছলন্দপুর, বিড়া, দত্তপুকুরে রেল অবরোধ হয়েছে। দত্তপুকুরে অবশ্য রেল অবরোধ করেছিলেন নিত্যযাত্রীরা।
শিয়ালদহ থেকে বনগাঁগামী ট্রেনটি বনগাঁয় না এসে দত্তপুকুরে পর্যন্ত আসে। সেখান থেকে ফের ট্রেনটি শিয়ালদহে যায়। তার প্রতিবাদে নিত্যযাত্রীরা কিছুক্ষণ অবরোধ করেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত ওই শাখায় রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। বনগাঁ-রানাঘাট শাখায় আকাইপুর স্টেশনে বন্ধ সমর্থকেরা হাইটেনশন তারে কলাপাতা ফেলে রাখায় দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
পেট্রাপোল বন্দরে বাণিজ্যের কাজ স্বাভাবিক ছিল এ দিন। বনগাঁ আদালতে আইনজীবীরা কাজ করেননি। তবে বাগদার সিন্দ্রাণী বাজার এলাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। ওই পঞ্চায়েত এ বার বিজেপি দখল করেছে। বাগদার নাটাবেড়িয়া বাজারেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। সকাল থেকে বিভিন্ন থানা এলাকায় পুলিশ সক্রিয় ছিল। কোথাও অবরোধের চেষ্টা হলে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।