Bangaon Blood Bank

বনগাঁ ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সঙ্কটের আশঙ্কা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছেছিল, ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালেই শিবির করতে হয়েছিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৯:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুজোর মরসুমে রক্তদান শিবির প্রতিবছর কম হয়। এই সময়ে রক্তের চাহিদা খুব বেশি থাকেও না। কিন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য এমনিতেই রক্তদান শিবির কম হয়েছে। রক্তের চাহিদা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

Advertisement

ব্লাডব্যাঙ্কের ইনচার্জ গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘শনিবার পর্যন্ত ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত মজুত আছে ১৮৮ ইউনিট। মাঝে দশ দিন কোনও শিবির হয়নি। কালীপুজোর মধ্যে দু’টো শিবির হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তারা তা বাতিল করেন। সামনে কয়েকটি শিবির হওয়ার কথা। সেগুলো থেকে রক্ত পেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। বাতিল হলে পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে। অনুরোধ করে শিবির করাতে হচ্ছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শিবির করতে এগিয়ে আসছেন না।’’

চিকিৎসকেরা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কের জেরে বন্ধ হচ্ছে রক্তদান শিবির। গোপাল বলেন, ‘‘আগে আমরা মাঠে-ঘাটে শিবির করতে পারতাম। এখন শিবির করতে হলে পরিকাঠামো থাকা জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিবির করতে হচ্ছে। সে কারণেই শিবিরের সংখ্যা কমে গিয়েছে।’’

Advertisement

ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর দুর্গা পুজোর সময়ে ৫টি শিবির হয়। এ বার হয়েছে তিনটি। দুর্গাপুজোর পরে লক্ষ্মীপুজোর মধ্যেও শিবির হয় অন্য বছর। এ বার একটিও হয়নি। কালীপুজোয় মহকুমায় দু’টি শিবির হওয়ার কথা ছিল। তা বাতিল করেছেন উদ্যোক্তারা। শেষ ১০ দিনে কোনও শিবির হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছেছিল, ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালেই শিবির করতে হয়েছিল। বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, পরিচিত লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্তদাতা জোগাড় হয়েছিল। বি পজ়িটিভ রক্তের মজুত পুরো শেষ হয়ে গিয়েছিল। ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশ, ক্লাব-সহ বিভিন্ন সংগঠনকে অনুরোধ করে শিবিরের আয়োজন করতে বলছেন। দিন কয়েক আগে বনগাঁ পোস্ট অফিস, বাগদায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকজন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। আরও দু’একটি শিবির হয়েছে বলে পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত হাতের বাইরে যায়নি বলে জানাচ্ছেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

কেন একের পর এক শিবির আয়োজন করেও বাতিল করছেন উদ্যোক্তরা?

অনেকে জানালেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের জেরে মানুষ এখন রক্তদান করতে চাইছেন না। যথেষ্ট সংখ্যক রক্তদাতা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে রক্তদান শিবিরের আয়োজকেরা শুধু মাত্র রক্তদান শিবিরই আয়োজন করেন না। সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বস্ত্রদান, স্বাস্থ্যশিবিরেরও আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা জলসার জন্য এখন প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না। সে জন্য উদ্যোক্তারাও শিবির বাতিল করে দিচ্ছেন। তা ছাড়া, অন্য অনুষ্ঠান করলে মানুষের জমায়েত হবে। সেটাও উদ্যোক্তারা চাইছেন না।

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে রক্ত সরবরাহ করা হত নিয়মিত ভাবে। এখন রক্তের অভাবে মহকুমার মানুষের চাহিদা মেটানোই সমস্যা হয়ে গিয়েছে।

ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য, রক্তদান শিবিরের আয়োজকদের বোঝাচ্ছেন, রক্তদানের সঙ্গে করোনার সংক্রমণ হওয়ার কোনও যোগসূত্র নেই। কয়েকটি নিয়ম মেনে শিবিরের আয়োজন করাই যায়। যেমন, সর্দি-কাশি থাকা মানুষদের রক্তদান শিবিরে আসা ঠিক নয়। বিদেশ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে আসা মানুষ শিবিরে আসতে পারবেন না। এক সঙ্গে ৪০-৫০ জন রক্তদান শিবিরে না এসে ৪-৫ জন করে এসে রক্ত দিতে পারেন। রক্তদান শিবিরের জায়গা খোলামেলা করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন