বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশনে অবরোধ। ছবি: নির্মল বসু
পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাস-সহ জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বন্ধের প্রভাব পড়ল না বনগাঁ ও বসিরহাটে। অন্য দিকে জয়নগর পুরএলাকা ছিল সুনসান।
তবে জয়গরের বাকি জায়গার জনজীবনে বন্ধের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। সোমবার কংগ্রেস পরিচালিত জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার প্রধান ফটক এ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। কর্মীরা পেছনের দরজা দিয়ে পুরসভায় ঢোকেন। তবে কর্মীরা এলেও কোনও কাজ হয়নি বলে পুরসভা সূত্রের দাবি। রাস্তাঘাটে গাড়ি চলেছে কম। স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। সকালে জয়নগরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বন্ধের সমর্থনে মিছিল করে কংগ্রেস, সিপিএম ও এসইউসি। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক ব্যাঙ্ক ও অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
জয়নগরের পুরপ্রধান সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘বন্ধ সফল করার জন্য সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাতে সাড়া দিয়েছেন। গঞ্জের বাজার থেকে জয়নগর রেলগেট পর্যন্ত সব দোকানপাট, ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল।’’
কংগ্রেস নেতা কুমারেশ ঘোষ বলেন, ‘‘কোথাও জোর করা হয়নি। ব্যাঙ্ক, অফিসগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছিল। নিজেরাই ওঁরা বন্ধ করে দেন।’’
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘সকালের দিকে কয়েকটি দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বেলা বাড়তেই সব খুলে যায়। মানুষ পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানতে পারছেন না ঠিকই। তবে তাঁরা ধর্মঘটের পক্ষে নয়।’’
এ দিকে, সকাল থেকে রেল অবরোধে ভোগান্তির শিকার হন এই অঞ্চলের মানুষ। ভোর ৫টা থেকে রেলের তারে কলাপাতা ফেলে অবরোধ শুরু হয় দক্ষিণ বারাসতে। যার জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় লক্ষ্মীকান্তপুর লাইনে দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বারুইপুর থেকে টাওয়ার ভ্যান এসে কলাপাতা সরিয়ে ট্রেন চালু করে।
বন্ধের জেরে কুলতলির কিছু কিছু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। সকালে কুলতলিতে কয়েকটি জায়গায় বন্ধের সমর্থনে আলাদা আলাদা মিছিল করে সিপিএম ও এসইউসি। কুলতলির সিপিএম বিধায়ক রামশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘আমরা কাউকে জোর করিনি। মানুষ দোকানপাট বন্ধ রেখে বন্ধ সফল করেন।’’ তৃণমূলের কুলতলি ব্লক সভাপতি গোপাল মাঝির অবশ্য দাবি, বন্ধের কোনও প্রভাব পড়েনি।
এ দিকে, এ দিন আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল সীমান্ত বাণিজ্য। যান চলাচল করেছে। খোলা ছিল বনগাঁর স্কুল, কলেজ, আদালত সরকারি অফিস, এমনকী দোকানপাটও। রাস্তায় বেরিয়ে মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়নি। বাজারহাটও খোলা ছিল। শুধুমাত্র তিরিশ মিনিট বাটার মোড়ে রেল অবরোধ হয়।
তবে বনগাঁ আদালতের আইনজীবীদের কাজে প্রভাব পড়েছে। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনে সম্পাদক সমীর দাস বলেন, ‘‘অতীতে বন্ধে একবার আদালত চত্বরে ভাঙচুর হয়েছিল। পর আমরা জয়েন্ট বার-এর তরফে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কোনও রাজনৈতিক দল বন্ধ ডাকলে আমরা আইনজীবীরা কাজ করব না।’’
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘গোটা জেলাতেই যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। রবিবার যান চালকদের সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছিল। তাদের নিরাপত্তার সব রকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।’’
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল স্বাভাবিক ছিল। দু’দেশের মধ্যে পণ্য ভর্তি ট্রাক যাতায়াত করেছে। পণ্য ওঠানো নামানোর কাজও হয়েছে। তৃণমূলের তরফে বন্দর এলাকায় সকালে বন্ধ-বিরোধী মিছিল করা হয়। পেট্রাপোল থেকে বাস ও ছোট গাড়ি যাত্রী নিয়ে কলকাতায় যাতায়াত করেছে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের কাজ করতে কোনও সমস্যা হয়নি।’’
বনগাঁ মহকুমাশাসকের অফিসে স্বাভাবিক দিনের মতো হাজিরা ছিল। বনগাঁ দীনবন্ধু কলেজে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। এ দিন পরীক্ষাও হয়েছে।
হাবড়া-অশোকনগরে অবশ্য বন্ধের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সমর্থকদের রাস্তায় দেখা গিয়েছে। এ দিন সকালে বামেরা হাবড়া ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় যশোর রোডে ও হাবড়া স্টেশনে মিনিট তিরিশ রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় এলাকায় কিছুক্ষণ অবরোধ করা হয়। বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশনে কিছুক্ষণ কংগ্রেস ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।
পুলিশ যেতেই বিক্ষোভকারীরা লাইন থেকে সরে যান। রেল অবরোধে ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদার-সহ অন্যেরা। বসিরহাটের মতোই গ্রামাঞ্চলেও দোকান বাজার খোলা ছিল। জনজীবন স্বাভাবিক ছিল।