সোনাটিকারিতে ফের চলছে সেতুর কাজ

প্রায় তিন বছর পর অবশেষে শুরু হয়েছে সোনাটিকারি নদীর উপরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতুর কাজ। তোলাবাজি, নির্মাণ সামগ্রী চুরি ও দুষ্কৃতী হানার জেরে কাজ ছেড়ে দিয়ে এক সময়ে চলে যেতে বাধ্য হয় নির্মাণকারী সংস্থা। এ বার অবশ্য কাজের বরাত নিয়েছে অন্য একটি সংস্থা। এই সেতু চালু হলে মথুরাপুর ২ ও জয়নগর ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নত হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০২:২০
Share:

চলছে সেতুর কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় তিন বছর পর অবশেষে শুরু হয়েছে সোনাটিকারি নদীর উপরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতুর কাজ। তোলাবাজি, নির্মাণ সামগ্রী চুরি ও দুষ্কৃতী হানার জেরে কাজ ছেড়ে দিয়ে এক সময়ে চলে যেতে বাধ্য হয় নির্মাণকারী সংস্থা। এ বার অবশ্য কাজের বরাত নিয়েছে অন্য একটি সংস্থা। এই সেতু চালু হলে মথুরাপুর ২ ও জয়নগর ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নত হবে।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুর ২, জয়নগর ২ ও কুলতলি ব্লকের বিভিন্ন জায়গাকে বিচ্ছিন্ন করেছে ঠাকুরান ও তার শাখা নদী মণি। উত্‌পত্তিস্থলে এই মণি নদীর নামই সোনাটিকারি। যার দু’পাড়ে রয়েছে মথুরাপুর ২ ব্লকের পূর্বজটা ও জয়নগর ২ ব্লকের চুপড়িঝাড়া (ঢাকি) গ্রাম। ঠাকুরান নদীর এক পাড়ে এই দুই গ্রামে দু’টি জেটি। অন্য পাড়ে কুলতলি ব্লকের দেবীপুরে রয়েছে আরও একটি জেটি। ঠিক যেন ত্রিভুজ আকার। আর তার তিনকোণায় অবস্থিত তিনটি জেটি। এই জেটিগুলি দিয়ে মানুষ পারাপার করেন ভুটভুটিতে। তা ছাড়া, একটি মাত্র ভুটভুটির মাধ্যমে এখানকার মানুষের যাতায়াত। যেখানে বোঝাই হয় নানা পণ্যসামগ্রী, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, সাইকেল, মোটরসাইকেল ইত্যাদি। কিন্তু জল কাদা দিয়ে রোজকার এই যাতায়াত খুবই সমস্যার বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিপদের আশঙ্কা নিয়েই নদী পারাপার করতে হয় তাঁদের। সে কারণে সেতুর মাধ্যমে দুই ব্লকের দুই সড়ক যুক্ত করবে বলে বাম সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। বাম আমলে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে প্রায় ১৯৩ মিটার দীর্ঘ ও সাড়ে সাত মিটার চওড়া সেতু নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করা হয়। বরাদ্দ করা হয় ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ ঢাকি বাজারে যার শিলান্যাস করেন তত্‌কালীন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিন বছরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে কাজ শুরু করে একটি ঠিকাদার সংস্থা। কিন্তু দু’বছরে প্রায় এক চতুর্থাংশ কাজ করার পরে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। চটিরাম মণ্ডল নামে ওই সংস্থার এক কর্মী বলেন, “তোলাবাজি, হুমকি, নির্মাণ সামগ্রী চুরির সঙ্গে বাড়তে লাগলো সেতুর নির্মীয়মাণ অংশের ক্ষতি করা। এমনকী, যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে যেত। বাধা দিতে গিয়ে ও চোর ধরতে গিয়ে পুলিশই প্রহৃত হয়েছে।” এর পরে সরকারি ভাবে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনকে সেতুর কাজ শেষ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশন সেই কাজের বরাত দিয়েছে আরও একটি সংস্থাকে। বরাদ্দ হয়েছে ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কাজ শেষ করার সময়সীমা ১৮ মাস দেওয়া হলেও সংস্থাটির দাবি নির্বিঘ্নে কাজ হলেও এই সময়সীমার মধ্যে যেহেতু দু’বার বর্ষাকাল আসবে, সে ক্ষেত্রে কাজ শেষ হতে দু’বছর লাগবে। মার্চেই শুরু হয়েছে মূল কাজ। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছ’জন প্রাক্তন সেনাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারি ভাবেও সমস্ত রকম প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়াও, বছর চারেক ধরে ওই এলাকায় স্থায়ী ভাবে মোতায়েন করা আছে কুলতলি থানার দু’জন কনস্টেবল ও একজন হোমগার্ড। ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পার্থ চক্রবর্তী বলেন, “সেতুর দু’দিকে এগারোশো মিটার রাস্তা তৈরির কথাও রয়েছে। যার জন্য প্রয়োজন জমি। যদিও সেই জমি এখনও অধিগ্রহণ বা কেনা হয়নি। যার দায়িত্ব সরকারের। সেই রাস্তা না থাকায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণের কাজে সমস্যা হচ্ছে।” যদিও স্থানীয় ব্লক প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জমি চিহ্নিত করার কাজ হয়েছে। জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। সেতুর কাজ ফের শুরু হওয়ায় খুশি তিন ব্লকেরই বাসিন্দারা। কুলতলির তারাপদ মণ্ডল, জয়নগর ২ ব্লকের সিরাজ মোল্লা, মথুরাপুর ২ ব্লকের সোমা হালদাররা বলেন, “সেতুর কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এতে ব্যবসা ও স্থানীয় পণ্য আমদানি রফতানির মাধ্যমে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন