ক্ষমা-কবিগুরু: নিজস্ব চিত্র
শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিরাজ করেন তিনি। অথচ, কবে তাঁর নাক ভেঙে গেল, খোঁজ রাখে না কেউ। বছরের পর বছর ধরে ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হয় ওই মূর্তিকে ঘিরেই। কিন্তু টাউনহল প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রমূর্তির ভাঙা নাক মেরামত করার উদ্যোগ দেখায় না কেউ।
এ বিষয়ে কখনও তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি বলে দাবি করেছেন বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার। কিন্তু তাঁর নিজেরও কী চোখে পড়েনি কখনও? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি বেদির উপরে বসানো হয়েছিল। একবার যখন নাক ভাঙার কথা জানতে পেরেছি, তখন দ্রুত কী ভাবে মূর্তিটি আগের চেহারায় ফিরে আনা যায়, তা দেখব।’’
প্রায় ছাপ্পান্ন বছর আগে বসিরহাট টাউনহলে প্রাঙ্গণের বাঁ দিকে বেদির উপরে রবি ঠাকুরের পাথরের আবক্ষ মূর্তিটি বসানো হয়েছিল। তারও আগে টাউনহলে ঢুকতে ডান দিকে বসানো হয়েছিল বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের আবক্ষ মূর্তি। স্থানীয় প্রবীণ মানুষজন স্মৃতি ঘেঁটে অনেক কষ্টে মনে করতে পারলেন, সম্ভবত, ১৯৭২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিটির নাক ভেঙেছিল কে বা কারা। সেই থেকেই কবিগুরুর নাক ভাঙা দশা।
প্রতিবছর জাঁকজমক করে ওই ভাঙা মূর্তিই ধুয়েমুছে মালা পরানো হয় রবীন্দ্রজয়ন্তীতে। বহু বিশিষ্ট মানুষও হাজির থাকেন সেখানে। মূর্তিতে মাল্যদান করেন। তবু কারও কোনও হেলদোল নেই। না কোনও পুরপ্রধান, না কোনও রাজনৈতিক দল মূর্তি সারানোর কথা ভাবেন।
শহরের বহু মানুষই এ নিয়ে বিস্মিত। এক প্রবীণ রবীন্দ্রানুরাগী তো বলেই ফেললেন, ‘‘এটা কোনও রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়। গোটা শহরবাসীর কাছে লজ্জার। কারও আগে চোখে পড়েনি যদি বলে থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে, এত বছর ধরে তিনি স্রেফ চোখ বন্ধ করেছিলেন।’’ শহরের আরও অনেকের আক্ষেপ, এক দিকে যখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে শহরের সৌন্দর্যায়ন হচ্ছে, রাশি রাশি প্রকল্প আসছে, তখন সামান্য টাকা খরচ করেও কেন বিশ্বকবির মূর্তির হাল ফেরানো হল না, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
নাগরিক কল্যাণ সমিতির সদস্য শান্তিকুমার রায় বলেন, ‘‘নাক ভাঙা অবস্থায় কবির মূর্তি দেখে সত্যই কষ্ট হয়। সমিতির পক্ষে কয়েক বছর আগে পুর কর্তৃপক্ষের হাতে স্মারকলিপি দিয়ে ভাঙা মূর্তি সারানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে কিছুই হয়নি।’’ সাহিত্যিক ব্যাসদেব গায়েন, সঙ্গীত শিল্পী অরূপ মজুমদার, চিত্রশিল্পী শঙ্কর সরকার, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক হিরন্ময় দাস, মলয় দাসদের বক্তব্য, ‘‘যে মানুষটার জন্য আজ বিশ্বের মাঝে ভারতবর্ষের মানুষের নাক উচুঁ হয়ে আছে, সেই মানুষটার মূর্তিই নাক ভাঙা অবস্থায় পড়ে!’’ বেদিতেও ফাটল ধরেছে।
বিষয়টি কানে উঠেছে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘‘দু’চার দিন আগে জানলে এতক্ষণে মূর্তি সংস্কারের কাজ হয়ে যেত। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব কলকাতা থেকে শিল্পী এনে রবীন্দ্র মূর্তি সংস্কার করার।’’