উৎসুক: পিঠে উৎসবে দর্শক।
মকরসংক্রান্তির দিন সকালবেলাই হেঁসেলে ঢুকে মেয়ে আর বৌমাকে নিয়ে পিঠে তৈরি করছিলেন সিন্দ্রাণীর কাঞ্চন বিশ্বাস। কড়াই, মাটির সরা থেকে পাত্রে তুলে একে একে সাজিয়ে রাখছেন দুধপুলি, মুখসামালি, আদোসা। সারাবাড়ি ভুরভুর করছে রকমারি পিঠের গন্ধে।
কিছুটা বাড়ির জন্য, আর বাকিটা যাবে ‘বিভূতির সংসার’-এ। সেখানে বাচ্চা-বুড়োদের পিঠে খাইয়ে তৃপ্তি পান কাঞ্চন। বললেন, ‘‘বাড়ির লোকেদের তো পিঠে করে খাইয়েই থাকি, বাইরের লোকেরা পিঠে খেয়ে সুখ্যাতি করলে তার আনন্দই আলাদা।’’ প্রায় একই সুর রূপা মণ্ডল, সঞ্চিতা দেবনাথ, কুমকুম বিশ্বাস, তপতী সরকারদের গলাতেও। তাঁরাও সকাল থেকেই উঠেপড়ে লেগেছেন ‘বিভূতির সংসার’ নামে এই পিঠে-পুলি উৎসবে। যা এ বার পা দিল চার বছরে।
পৌষপার্বণে বাংলার পিঠে-পুলি তৈরির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এই উৎসবের আয়োজন বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। এলাকার প্রায় ষাটজন মহিলা বাড়ি থেকে রকমারি পিঠে তৈরি করে এনেছিলেন। সংস্থার দফতরে বসেও পিঠে বানিয়েছেন অনেকে। প্রায় পঞ্চাশ রকম পিঠে ছিল উৎসবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির প্রবাসী পদার্থবিজ্ঞানী প্রীতিময় সেনগুপ্ত। পিঠে খেয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে তো কখনও পিঠের স্বাদ পাই না। ছেলেবেলায় মা-ঠাকুমার হাতে তৈরি পিঠে খেতাম। সে কথা আজ আবার মনে পড়ে গেল।’’ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রণঘাট ক্যাম্পের বিএসএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ড্যান্ট জয় ভগবান ও বাগদা থানার ওসি অসীম পাল। অনুষ্ঠানে এসে পিঠে খেয়ে অভিভূত তাঁরাও।
উদ্যোক্তাদের তরফে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘এ বার আমরা মোহিণী, ক্ষীরমুরলি, নকসি–সহ বেশ কয়েকটি নতুন ধরনের পিঠের স্বাদ পেলাম। এখন দোকানেও পিঠে পাওয়া যায়। কিন্তু বাঙালির হেঁসেলে তৈরি পিঠের স্বাদই আলাদা। আমরা সেই অতীত সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছি, যাতে নতুন প্রজন্মও সেই স্বাদ পেতে পারে।’’ — ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক