প্রতীকী ছবি।
পাড়ার ক্লাব জমির দখল নিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সেই জমি দখলমুক্ত করার আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন অনেকেই। জমির নথি খতিয়ে দেখে মালিককে আদালতের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও নজিরবিহীন নয়। বছর দু’য়েক আগে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য দক্ষিণ কলকাতার একটি জমি তার মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্থানীয় একটি ক্লাব ওই জমির একাংশ দখল করে রেখেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার হাইকোর্টের নির্দেশেই বারাসতের একটি খেলার মাঠ রয়ে গেল খেলার মাঠ হিসেবেই। মামলাটি হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের তরুণ বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে।
সরকারি কৌঁসুলি অসীম গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানান, বারাসত পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। স্থানীয় একটি ক্লাব ওই মাঠে নিয়মিত খেলাধুলোর আয়োজন করে থাকে। ওই মাঠের মালিক বলে পরিচয় দিয়ে মাস দেড়েক আগে বিনোদ সিংহ নামে এক ব্যক্তি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে মামলা করেন। মামলার আবেদনে তাঁকে মাঠ ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান ওই ব্যক্তি।
সরকারি কৌঁসুলি জানান, গত ৮ জুন মামলাটির প্রথম শুনানি হয়। ওই দিন বিনোদের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন না।
বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ সে দিন বারাসতের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং পুলিশকে ওই মাঠ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নির্দেশ দেন, ওই রিপোর্টের প্রত্যয়িত প্রতিলিপি মামলার আবেদনকারীকেও দিতে হবে। রিপোর্ট নিয়ে তাঁর কিছু বলার থাকলে তা তিনি হলফনামা দিয়ে আদালতে জানাবেন।
সেই রিপোর্ট জমা পড়ে গত ১৯ জুলাই। ওই দিন মামলার শুনানিও ছিল। রিপোর্টে লেখা ছিল, ওই ক্লাবটি গত ৩০ বছর ধরে ওই মাঠে স্থানীয়দের নিয়ে নিয়মিত খেলাধুলোর আয়োজন করে। ওই মাঠে বহু দিন ধরে দুর্গাপুজো ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। স্থানীয় বেশ কয়েক জন বাসিন্দা এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সমীর তালুকদার সেই মর্মে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। রিপোর্টে এ-ও বলা ছিল যে, বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই মাঠকে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করে আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউই নিজের দাবির সমর্থনে কোনও সরকারি নথি প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে পারেননি। ১৯ জুলাইও মামলার আবেদনকারীর পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন না বলে সরকারি কৌঁসুলি জানান।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দিন জানিয়ে দেন, আবেদনকারীকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তাঁর বক্তব্য জানানোর। তিনি ওই রিপোর্ট নিয়ে কোনও হলফনামাও দেননি। আদালত কোনও ভাবেই বেআইনি ভাবে কাউকে উচ্ছেদ করতে পারে না। উল্টে মামলার আবেদনকারীকে বিচারপতি এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই টাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের হাতে জমা দিতে।