কাজের টোপ দিয়ে চলছে নারী পাচার, রুখতে স্কুলে স্কুলে শিবির

এই ঘটনা শুধু ওই যুবতীর সঙ্গে ঘটেছে তা নয়, মন্দিরবাজার এবং মথুরাপুরের কয়েকজন যুবতী ও নাবালিকাদেরও কাজের টোপ দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। তাঁদের ফিরিয়ে আনার পর পুলিশের হাতে এমন সব তথ্য এসেছে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৮:৫০
Share:

সচেতনতার-বার্তা: প্রতিটি স্কুলে গিয়ে বোঝাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। নিজস্ব চিত্র

কলকাতায় চাকরির কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলেন কাকদ্বীপের যুবতী। অভাবের সংসার। তাই কোনও কথা চিন্তা না করে এক যুবকের সঙ্গে চাকরির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয় পুণের এক যৌন পল্লিতে। কাজের টোপ দিয়ে তাঁকে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

এই ঘটনা শুধু ওই যুবতীর সঙ্গে ঘটেছে তা নয়, মন্দিরবাজার এবং মথুরাপুরের কয়েকজন যুবতী ও নাবালিকাদেরও কাজের টোপ দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। তাঁদের ফিরিয়ে আনার পর পুলিশের হাতে এমন সব তথ্য এসেছে।

তাই পাচার রুখতে এ বার থেকে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে স্কুলে বিশেষ শিবির করা হবে পুলিশের পক্ষ থেকে। মহিলা পুলিশকর্মীদের নম্বর এলাকার প্রতিটি মেয়েদের কাছে দেওয়া থাকবে। যে কোনও সমস্যার কথা যাতে তারা অনায়াসে বলতে পারে। তার জন্যই এই ব্যবস্থা। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে ঢোলাহাট-সহ আরও কয়েকটি থানা এলাকা থেকে নারী পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। তারপরেই এই এলাকাগুলির থানাকে নতুন উদ্যমে নামতে বলা হয়েছিল।’’

Advertisement

ঢোলাহাটে পাচারের প্রবণতা যথেষ্ট বেশি। তাই এখানে প্রথম শুরু হল এই প্রকল্প। থানার ওসি সলিল মণ্ডল জানিয়েছেন, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা অনেক সময়ই ভয়ে, লজ্জায় নিজেদের নানা সমস্যার কথা চেপে যায়। স্কুলের মেয়েদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় পুলিশ। যেখানে শুধুমাত্র নারী পাচার রোখার বিষয় নয়, নাবালিকা বিয়ে, যৌন হেনস্থার মতো সমস্যার কথাও মেয়েরা থানার মহিলা পুলিশকর্মীদের জানাতে পারবে।

সম্প্রতি ঢোলার পুর্ণচন্দ্রপুর চাঁদমণি শিক্ষাভবনে একটি বড় সচেতনতা শিবির হয়ে গেল। প্রায় ৫০০ ছাত্রছাত্রী হাজির ছিল সেখানে। থানার মহিলা পুলিশকর্মীরা তাদের বোঝায়, কী ভাবে মোবাইলে বন্ধুত্বের টোপ থেকে মেয়েরা পাচার হয়ে যাচ্ছে, কী ভাবে তাঁদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হচ্ছে। অথবা মেয়েদের উপর কোনওরকমের অন্যায় হলেও তাঁরা লজ্জাতেই চুপ করে থাকতে পছন্দ করে। স্কুলের শিক্ষক ইউসুফ হালদার বলেন, ‘‘এই আলোচনার জন্য অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। স্কুলের ছাত্রীরা প্রশ্নোত্তরে যোগ নিয়েছে। এমন ব্যবস্থা নিলে নিশ্চয়ই পাচার রোখা যাবে।’’

পুলিশকর্তাদের দাবি, একবার যদি মেয়েরা বলতে শুরু করে তবে অপরাধের প্রবণতাই অনেকটা কমবে। কারণ বিষয়টি আগে থাকতে জেনে গেলে পুলিশের পক্ষে আটকানোর কাজ করতে সহজ হবে। ঢোলাহাট থানা এলাকায় সবগুলি স্কুলেই এই ধরনের আলোচনাসভা এবং যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেগুলি প্রতি সপ্তাহে বাস্তবায়িত করা হবে। স্কুলের পর আইসিডিএস এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও কাজে লাগানো হবে পাচার বিরোধী নেটওয়ার্কের অঙ্গ হিসেবে। কোনও একটি সমস্যা নিয়ে মেয়েরা নানারকমের প্রস্তাবও দিতে পারে। প্রয়োজনে সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন