একাই ধান কাটছেন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
মাঝে মধ্যেই হাঁফ ধরে যাচ্ছিল। খানিক জিরিয়ে আবার কাস্তে হাতে ধান কাটা শুরু করছিলেন সত্তর বছরের বৃদ্ধ চাষি গোপাল দাস।
গাইঘাটার বর্ণবেড়িয়া এলাকায় রামনগর রোডের পাশে ১২ কাঠা জমি লিজ নিয়ে আমন ধান চাষ করেছেন গোপালবাবু। মাঠ উপচে ধান হয়েছে। কিন্তু সেই ধান কাটবে কে? ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে না পারায় এখন হাতে নগদ নেই তাঁর। মজুরির সমস্যায় শ্রমিক পাননি। এ দিকে ধান তোলার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে দিন কয়েক ধরে ভোরের আলো ফুটতেই কাস্তে হাতে জমিতে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত নিজের হাতে ধান কাটছেন বৃদ্ধ চাষি।
গোপালবাবু কোনও ব্যতিক্রম নন। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে এমনই অবস্থা হয়েছে অনেক চাষির। আমন ধান কাটার নির্দিষ্ট সময়ে চলে গেলেও বিঘার পর বিঘা জমিতে ধান পড়ে রয়েছে। রামনগর রোডের জমি ছাড়াও আরও ২৫ কাঠা জমিতে লিজ নিয়ে ধান চাষ করেছেন গোপালবাবু। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার জন্য সেই জমিতেও ধান কাটা হয়নি। গোপালবাবু বলেন, ‘‘নগদ সমস্যার কারণে কেউ কাজ করতে চাইছেন না। এদিকে হাতে সময় নেই। শেষ পর্যন্ত শ্রমিক না পেলে দুই ছেলেকে নিয়েই ২৫ কাঠা জমির ধান কাটতে শুরু করব।’’
গোপালবাবুর জমির পাশে ১৫ কাঠা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করেছেন স্থানীয় চাষি বিনয় বিশ্বাস। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় তাঁকেও ধান কাটায় হাত লাগাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে তিন জন শ্রমিক পেয়েছি। তবে হাতে কোনও নগদ নেই। ধান কাটা হয়ে গেলে ডাকঘরে যাব। সেখান থেকে টাকা পেলে তবেই শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারব।’’
বিশ্বজিৎ খাঁ নামে এক শ্রমিক জানান, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ধান কাটলে ২০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। কিন্তু কাজ করলেও মজুরি মিলছে না। এক চাষির পটল খেতে তিনি চার দিন আগাছা সাফাইয়ের কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখনও টাকা পাননি। কল্পনা বিশ্বাস, রোমেজা মণ্ডলদের মতো কয়েকজন দিনমজুরের ক্ষোভ, ‘‘মজুরির টাকা পেয়ে চাল, ডাল কিনি। কিন্তু এখন সেই টাকা পাচ্ছি না। সংসার চালানো দায় হচ্ছে।’’
অন্যান্য বছর এই সময়ে আমন ধান কাটা হয়ে যায়। কিন্তু এ বছরের ছবি প্রায় পুরোটাই আলাদা। এই ঘটনায় চিন্তার ছাপ পড়েছে কৃষি কর্তাদের কপালে। গাইঘাটা ব্লকের সহ কৃষি আধিকারিক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আমন ধান কাটার সময়সীমা ছিল। এখনও যাঁরা ধান কাটেননি তাঁদের দ্রুত ধান কাটতে হবে। না হলে ধানের গুণগত মান কমবে এবং পরবর্তী সময়ে ওই জমিতে চাষেও সমস্যা হতে পারে।’’