চাষের জলে বোতল ভরছে শিশুরা

ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতে প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষের বাস। নিকাশি খালের উন্নয়ন হয়নি। ফলে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে বোরো চাষ হয়। সে জন্য মাঠে বসানো হয়েছে সাবমার্সিবল।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

জয়নগর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৯
Share:

তেষ্টা-মেটাতে: জল নেওয়ার জন্য মাঠে লাইনে দাঁড়িয়ে শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

চাষের জমিতে পানীয় জলের বোতল নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কচিকাঁচারা। সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানীয় জল ভরে আনতে হচ্ছে তাদের। কারণ, স্কুলে পানীয় জলের নলকূপ নেই। বাড়ি থেকে জলের বোতল নিয়ে এলেও তা কিছুক্ষণ পরেই শেষ। আর গ্রামের একমাত্র নলকূপ মাস দেড়েক ধরে খারাপ। ফলে বাধ্য হয়ে বোতল নিয়ে ছুটতে হয় চাষের জমিতে।

Advertisement

এই দৃশ্য এই নুরজাহান স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তবে জয়নগর ১ ব্লকের আরও বহু স্কুলে চলছে এই পরিস্থিতি। জলস্তর নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ গ্রামেরই নলকূপ অকেজো। পানীয় জলের হাহাকার চলছে এলাকা জুড়ে।

ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতে প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষের বাস। নিকাশি খালের উন্নয়ন হয়নি। ফলে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে বোরো চাষ হয়। সে জন্য মাঠে বসানো হয়েছে সাবমার্সিবল। একটি সাবমার্সিবল থেকে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে ধান চাষের জল জোগায়। আর এর জেরেই জলস্তর নেমে গিয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা। ফলে গ্রামের নলকূপও খারাপ হয়ে গিয়েছে। জয়নগর ১ ভারপ্রাপ্ত বিডিও বিপ্লব পাল বলেন, ‘‘বেশ কিছু নলকূপের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

অনেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূর থেকে জল আনছেন। সেই গ্রামের মানুষের মুখ ঝামটাও শুনতে হচ্ছে। কেউ আবার কড়া রোদ মাথায় দু’তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে হয়রান হচ্ছেন জলের লাইনে। স্কুলের কল খারাপ হয়ে মিড ডে মিলের রান্নাতেও অসুবিধা হচ্ছে। অল্প জলেই চালাতে হচ্ছে বলে জানালেন কোনও কোনও স্কুলের কর্তৃপক্ষ।

জয়নগর উত্তর চক্রের স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘প্রায় ১২টি স্কুলের নলকূপ খারাপ হয়ে গিয়েছে। মিড ডে মিলের রান্না ও খাওয়ার জল বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এমনকী, স্কুল থেকে কচিকাঁচারা বেরিয়ে পুকুরে হাত-মুখ ধুচ্ছে। এতে নিরাপত্তার অভাবও হচ্ছে।’’ নলকূপ বসানো বা সংস্কারের বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

ওই এলাকায় ঢোসা চন্দনেশ্বর পঞ্চায়েতে মানিকনগর গ্রামের দু’টি নলকূপ মাসখানেক ধরে অকেজো। মানুষকে ছুটতে হচ্ছে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে চড়াঘাটা গ্রামে। ওই গ্রামের মহিলারা বলেন, ‘‘দু’মুঠো ভাত চাইলে না করব না, কিন্তু পানীয় জল চাইলে ভেবে দেখব।’’

ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হারানন্দ হালদারের অভিযোগ, মাঠে সাবমার্সিবলের জন্য জলের স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কত নলকূপ সারানো হয়েছে বা কত সারানোর আবেদন এসেছে তা বলা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন মানুষ নলকূপের সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসছেন। এ সমস্যা শুধু আমার নয়, পাশের পঞ্চায়েতগুলিতে একই পরিস্থিতি চলছে।’’

জয়নগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মাধবী হালদার বলেন, ‘‘নলকূপের সমস্যা নিয়ে যাঁরা আমার কাছে আসছেন, আমি তাঁদের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে পাঠাচ্ছি। কারণ, নলকূপ সারানো বা নতুন নলকূপ বসানোর মতো তহবিল আমাদের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন