জলপথে হামেশাই দেখা মেলে এই দৃশ্যের। —ফাইল চিত্র।
শান্তিপুরে নৌকোডুবির ঘটনা ভাবাচ্ছে অন্য জেলার প্রশাসনের কর্তাদেরও।
সোমবার হাসনাবাদে বিডিও অফিসে মাঝি এবং ঘাটমালিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভাবতেই হবে সব পক্ষকে। আরও বলা হয়, প্রশাসনের নিয়ম-কানুন না মানলে মাঝি এবং ঘাটমালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে জরিমানা, গ্রেফতার— দুই’ই হতে পারে।
নদীপথ বহুল হাসনাবাদে যাতায়াতের বড় মাধ্যম হল জলপথ। অনেক সময়েই নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত যাত্রীবহণ করা হয় নৌকো, ভুটভুটিতে। নৌযানগুলির পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন আছে। নিয়মিত সেগুলি মেরামত করা হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। মাঝি-মাল্লাদের প্রশিক্ষণ নির্ভরযোগ্য নয় বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে।
যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রশাসনের পক্ষে ফেরিঘাটে পর্যাপ্ত আলো, সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। পাশাপাশি, দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারের কাজে নামার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের রাখা হবে। হাসনাবাদের বিডিও রঞ্জিত সেনগুপ্ত জানান, ফেরিঘাট লিজে দেওয়ার সময়ে প্রশাসনের দেওয়া কয়েকটি নিয়ম মানছেন না ঘাটমালিক এবং মাঝি-মাল্লারা। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার পাশাপাশি সুযোগ বুঝে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ সব আটকাতে ইছামতী (কাটাখালি) নদীর দু’পাড়েই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হবে। বিপদআপদ ঘটে গেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের উদ্ধারের কাজে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশ নজরদারি, স্পিড বোটের ব্যবস্থা রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, যন্ত্রচালিত ৪টি বড় নৌকা চালাতে হবে। অবিলম্বে ফেরিঘাট ও নৌকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দিন-রাতে ভাড়ার তালিকা টাঙাতে হবে। এই সব নিয়মের অন্যথা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওা হতে পারে। লিজ বাতিলও হতে পারে ঘাটমালিকদের।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ এবং পারহাসনাবাদের মধ্যে নৌকা চলাচলের জন্য ২৭ লক্ষের কিছু বেশি টাকায় ৩ বছরের জন্য ফেরিঘাট লিজে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা ঘাটমালিক বা মাঝি-মাল্লাদের। যার মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল,
১। ছোট নৌকায় ১৫ জন এবং বড় নৌকায় ৫০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না।
২। ছোট নৌকায় ২টির বেশি মোটর বাইক তোলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পনেরো জনের বদলে যাত্রী সংখ্যা হতে পারে সর্বোচ্চ ৬ জন।
৩। ফেরিঘাটে পর্যাপ্ত আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শৌচাগার থাকা জরুরি।
এ ছাড়াও আরও খুঁটিনাটি নিয়ম-কানুন আছে। যদিও যাত্রীদের অভিযোগ, সে সব কিছুর তোয়াক্কা করা হয় না। হামেশাই নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। তার উপরে তোলা হয় বিপুল পরিমাণে মালপত্র। দিন-রাতের ভাড়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। বিশেষ করে রাত ১০টার পরে ফেরিঘাটে খেয়ালখুশি মতো টাকা চাওয়া হয়।
হাসনাবাদ ব্লক অফিসের ওই বৈঠকে ফেরিঘাট মালিক এবং মাঝি মাল্লাদের প্রতিনিধি ও বিডিও ছাড়াও উপস্থিতি ছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক রমেশচন্দ্র গাইন, সিআই প্রসূন খাঁ, ওসি গোপাল বিশ্বাস-সহ অনেকে।
গোপালবাবু বলেন, ‘‘মানুষ যাতে নিরাপদে পারাপার করতে পারেন, সে দিকে লক্ষ্য রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা শবদেহ দেখতে চাই না। চাই মানুষের নিরাপদ পারাপার।’’
বৈঠকে এসেছিলেন হাসনাবাদ ফেরিঘাট ও ফেরিচালক ইউনিয়নের সভাপতি কেনারাম দাস। তিনি বলেন, ‘‘লিজের শর্ত মানতে আমরা বাধ্য। তবে বেশি ভাড়া নেওয়া বা নৌকোয় বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ তাঁর দাবি, রাতের দিকে, বিশেষত ঝড়-বৃষ্টির সময় বা শীতের রাতে যাত্রী কমে যাওয়ায় মাঝি-মাল্লারা সামান্য কিছু বেশি ভাড়া চান।’’
কেউ নিয়মবিরুদ্ধ কিছু করলে সংগঠন শাস্তি দেয় বলে দাবি করে কেনারামবাবু জানান, ১৫ জনের পরিবর্তে ১৭ জন যাত্রী তোলায় সোমবারই তিন জন মাঝিকে তিন দিনের জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।