অবাধেই পথে বিকোচ্ছে রঙিন জল, বরফ গোলা

রং থেকে গন্ধ, জল থেকে বরফ— সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় কোনওটাই। উত্তর শহরতলি জুড়ে তবু রমরমিয়ে বিকোচ্ছে রঙিন জলের সরবত আর রংবেরঙের বরফ গোলা।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

জেনেশুনে: রঙিন সরবত কিনতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

রং থেকে গন্ধ, জল থেকে বরফ— সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় কোনওটাই। উত্তর শহরতলি জুড়ে তবু রমরমিয়ে বিকোচ্ছে রঙিন জলের সরবত আর রংবেরঙের বরফ গোলা। স্বাদে-গন্ধে রসনার তৃপ্তি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গেই শরীরেও যে বিষ ঢুকছে, সে বিষয়ে পুরসভা থেকে পুলিশ, সবাই নির্বিকার। কলকাতা শহরে পুরসভা তবু মাঝেমধ্যে কাটা ফল বা রঙিন সরবতের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। কিন্তু শহরতলিতে তার নামগন্ধও নেই। দিনের পর দিন অবাধেই চলছে এই ব্যবসা।

Advertisement

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আর্দ্রতা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাঁসফাঁস অবস্থা পথচলতি মানুষের। চোখের সামনে ঠান্ডা সিরাপের ঠেলা গাড়ি বা কোলা কাউন্টার পেলে লোকজন রোদ মাথায় নিয়ে ভিড় বাড়াচ্ছেন সেখানেই। থার্মোকলের বাক্সে রাখা বরফের চাঙড়, যার পোশাকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইস। মানুষের খাওয়ার জন্য নয়। কিন্তু সেই বরফই অবাধে চলে যাচ্ছে সরবতের গ্লাসে। বরাহনগর থেকে বীজপুর— এই ঠান্ডা সরবতই এখন লাভের মুখ দেখাচ্ছে সরবত বিক্রেতাদের। সরবতের মান যত খারাপই হোক, মানবদেহের পক্ষে তা যত ক্ষতিকরই হোক, নির্ভয়েই ব্যবসা চালাচ্ছেন ওই বিক্রেতারা।

কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে পথে পথে এই ছিনিমিনি খেলা কি চলতেই থাকবে? কী করছে প্রশাসন? রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘সরবত, সিরাপ, রঙিন গোলা বিক্রিতেও পুরসভার নজরদারি শুরু হয়েছে। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গুণমান যাচাই করিয়ে তা বিক্রি করতে পারবে শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া দোকানগুলি। পথের ধারে এই সব দোকানের ক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট বিভাগও নজর রাখবে। এর মধ্যেই জেলার পুরসভাগুলিকে নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করব।’’

Advertisement

পুরসভার চোখের সামনেই বা দিনের পর দিন এই ধরনের গোলা বা সরবতের বিক্রি চলছে কী ভাবে?

ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, ‘‘রঙিন
সরবত, বরফের গোলা বিক্রির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পুরসভার তরফে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ
করা হবে।’’

এই ধরনের সরবত কি আদৌ নিরাপদ? প্রবীণ চিকিৎসক বিজনবিহারী রথ বা জওহরলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জেনে বা না জেনে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে এই বিষ পান করছেন। গ্লাস থেকে বরফ, সবটাই তো অস্বাস্থ্যকর। কেউ দায়ে পড়ে, কেউ বা আবার মোহে পড়ে খাচ্ছেন। এর থেকে এক বোতল জল কিনে খাওয়া অনেক ভাল।’’ কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাচের গ্লাস হলে একই গ্লাস একই গামলার জলে বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা হয়। আর প্লাস্টিকের গ্লাস কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে তো প্রশ্ন থাকেই। সব চেয়ে বড় কথা, এই বরফ আর সিরাপের মিশ্রণ সব জায়গায় গুণমান মেনে তৈরি হয় না।’’ ইন্ডাস্ট্রিয়াল বরফ সাধারণত পচন রোধে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা আর করছে কে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন