বেতন বৃদ্ধির দাবি
Comb Factory

কর্মবিরতি শুরু চিরুনি শ্রমিকদের 

কয়েক মাস ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চিরুনি  শ্রমিকেরা পথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল, মিটিং, অবস্থান-বিক্ষোভ, পথ অবরোধ  কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০২
Share:

বন্ধ চিরুনি কারখানা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সোমবার থেকে বনগাঁর চিরুনি শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করলেন। উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল।

Advertisement

বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সেন বলেন, ‘‘সোমবার থেকে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আমাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মালিকেরা না মানলে কর্মবিরতির দিন পরবর্তী সময়ে আরও বাড়ানো হবে।’’

কয়েক মাস ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চিরুনি শ্রমিকেরা পথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল, মিটিং, অবস্থান-বিক্ষোভ, পথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। তাতে তাঁদের সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় এ বার কর্মবিরতির পথে গেলেন। শ্রমিকদের কর্মসূচির জেরে এমনিতেই কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চিরুনি শ্রমিকেরা সপ্তাহে তিন দিন কাজ করছিলেন। এখন কর্মবিরতির ফলে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল।

Advertisement

চিরুনি শ্রমিকদের বক্তব্য, কয়েক মাস ধরে চিরুনি কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে। অথচ মালিক পক্ষ তাঁদের বেতন বাড়াচ্ছেন না।

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রমিকেরা প্রথম পথে নামেন। পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ হয়। শ্রমিকদের কর্মসূচি থেমে গিয়েছিল। কয়েক মাস হল ফের কারখানা চালু হয়েছে। উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, এরপরেও তাঁদের বেতন বাড়ানো নিয়ে মালিকেরা কোনও সাড়াশব্দ দিচ্ছেন না।

রঞ্জন বলেন, ‘‘১২ মাস হয়ে গেল, মালিকেরা বেতন বাড়াচ্ছেন না। এখন কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। তবু মালিকেরা করোনা পরিস্থিতির কথা বলে বেতন বাড়াচ্ছেন না। অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে চিরুনি শ্রমিকেরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। বেতন বৃদ্ধি না হলে না খেয়ে থাকবেন।’’

শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় এখন ছোট-বড় মিলিয়ে চিরুনি কারখানার সংখ্যা ১৩৫টি। সেখানে কয়েকশো শ্রমিক কাজ করেন। রঞ্জন বলেন, ‘‘রোজগার না থাকায় গত এক বছরে প্রায় ১০০ জন শ্রমিক কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।’’

নোট বাতিলের সময় থেকে এই শিল্পে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা পুরোপুরি সামলে উঠতে না উঠতে আর্থিক মন্দার ধাক্কা লাগে। তারপরে করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের কারণে বনগাঁর চিরুনি শিল্প কার্যত এখন ধুঁকছে। বাইরের রাজ্যগুলিতে আগের মতো চিরুনি পাঠাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। সে কারণে রোজগার কমেছে।

বনগাঁ সেলুলয়েড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহাদেব ঘোষ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ২-৩ বছর অন্তর শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। জানুয়ারি মাসে পুরনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। কারখানা বন্ধ হয়। কয়েক মাস আগে উৎপাদন শুরু হলেও বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। বাইরের রাজ্যে চিরুনি পাঠানো যাচ্ছে না। শ্রমিকদের বেতন আমরা অবশ্যই বাড়াব। তবে ওঁরা যতটা বেতন দাবি করছেন, তা বাড়ানো সম্ভব নয়। ওঁরা অনড়। তবে আলোচনা চলছে।’’

অনিল পাল, তুষার মণ্ডল, বলরাম দাস, শ্যামপ্রসাদ বৈরাগীর মতো শ্রমিকেরা জানালেন, লকডাউনে কয়েক মাস কাজ ছিল না। এখনও যা পরিস্থিতি, সংসার চালানো আর সম্ভ হচ্ছে না। বেতন না বাড়লে পথে বসার মতো অবস্থা হবে। শ্রমিকেরা কাজের ভিত্তিতে সপ্তাহে ৯০০-১৬০০ টাকা বেতন পান। শ্রমিকদের দাবি, বেতন বাড়িয়ে ১৪০০-২২০০ টাকা করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন