বটগাছের নীচে চলছে রান্না। চলছে মিষ্টি কেনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
গ্রামের মধ্যে বিশাল মাঠ। রবিবার ভোর হতেই সেখানে শুরু রসগোল্লা, কালোজাম, জিলিপি, বোঁদে-সহ হরেক মিষ্টির দেদার বিকিকিনি। ভোর বেলাতেই মিষ্টি কেনার জন্য বালতি, গামলা হাতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
২৫ অগ্রহায়ণ। এই দিনটি বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সভাইপুর গ্রামের মানুষের কাছে বিশেষ দিন। কারণ, এই দিন ভোর থেকে ওই গ্রামের মাঠে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে স্থানীয় বাসিন্দারা এক দিনের মিষ্টি মেলায় মেতে ওঠেন। সেই মেলার পোশাকি নাম, ‘বুড়িমার মেলা।’ গ্রামবাসীদের কাছে এই মেলা হল আসলে সম্প্রীতির উৎসব। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সন্তোষ রায় বলেন, ‘‘বুড়িমার মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমানের এলাকায় সম্প্রীতির ভিত দৃঢ় হয়। এটি বড় পাওনা।’’
জনশ্রুতি আছে, বহু বছর আগে গ্রামে নানা রোগে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সে সময়ে এক বৃদ্ধা গ্রামে মিষ্টি মেলার আয়োজন করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তারপর থেকেই এই মেলার শুরু। বিশেষ এই দিনটিতে গ্রামে প্রায় কারও বাড়িতেই রান্না হয় না। গ্রামের একটি পুরনো বটগাছের নীচে উনুন খুঁড়ে খিচুরি রান্না হয়। ওই প্রাচীন বটগাছের কাছে মানতও করেন অনেকে। মেলা উপলক্ষে বিচিত্রানুষ্ঠান হয়।
শুধু সভাইপুর নয়, মনিগ্রাম, ধর্মপুকুরিয়া, পানচিতা, সীতানাথপুরের বহু গ্রামের মানুষ মেলায় আসেন। ইমাদুল মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এই মেলাটি শুরু করেছিলেন মুসলিম সম্পদায়ের মানুষ। পরবর্তী সময়ে হিন্দুরাও যোগ দেন। এখন সব মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, দুর্গাপুজো ও ঈদ নয় বরং বুড়িমার মেলাই হল সভাইপুর গ্রামের মানুষের প্রধান উৎসব। মেলা দেখতে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আত্মীয়, পরিজন আসেন। কর্মসূত্রে যাঁরা গ্রামের বাইরে থাকেন, তাঁরা এ সময়ে গ্রামে ফেরেন। সিআরপিএফ জওয়ান নাজমুল হুদা মণ্ডলও ওড়িশা থেকে ফিরেছেন গ্রামের বাড়িতে। বললেন, ‘‘যেখানেই থাকি, বছরের এই সময়ে মেলার টানে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করি। অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়।’’