দেওয়ালে কাদা লেপে শাসানি, অভিযুক্ত তৃণমূল

ডায়মন্ড হারবার: দেওয়ালে বিপক্ষ দলের প্রার্থীদের নাম, প্রতীক। আর তার উপরে লেপা কাদা। বিরোধীদের দেওয়াল লিখতে সরাসরি ‘নিষেধাজ্ঞা।’ বিরোধীদের চুনকাম করা দেওয়ালে চুপিসাড়ে এসে শাসক দলের প্রার্থীর নাম, প্রতীক এঁকে চলে যাওয়া।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০২:২২
Share:

বিরোধীদের আঁকা দেওয়ালে লেপে দেওয়া হয়েছে চুন। মগরাহাটের বিলন্দপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ডায়মন্ড হারবার: দেওয়ালে বিপক্ষ দলের প্রার্থীদের নাম, প্রতীক। আর তার উপরে লেপা কাদা। বিরোধীদের দেওয়াল লিখতে সরাসরি ‘নিষেধাজ্ঞা।’ বিরোধীদের চুনকাম করা দেওয়ালে চুপিসাড়ে এসে শাসক দলের প্রার্থীর নাম, প্রতীক এঁকে চলে যাওয়া।

Advertisement

এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠছে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মন্দিরবাজার, কুলপি, ফলতা ও মগরাহাট পূর্ব এলাকায়।

সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শাসকদল অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে। সমস্ত স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢোকানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।’’ যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি শক্তি মণ্ডলের দাবি, ‘‘ভোটে হেরে যাবে বুঝে ওরা অপপ্রচার শুরু করেছে।’’

Advertisement

মন্দিরবাজার কেন্দ্রে নিশাপুর পঞ্চায়েতে ঝাপবেড়িয়া, সেকেন্দারপুর, টেকপাঁজা ও নিশাপুর বুথ এলাকায় জানা গেল, এখনও পর্যন্ত দেওয়াল লিখতেই পারা যায়নি বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। ওই এলাকায় দক্ষিণ বিষ্ণুপুর ও চাঁদপুর চৈতন্যপুর পঞ্চায়েতে বেশ কয়েকটি বুথে দেওয়াল লেখায় বাধার অভিযোগ এনেছে সিপিএম। স্থানীয় এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘বেশ কিছু বুথে দেওয়াল লেখার সাহস পাচ্ছেন না কর্মীরা। কোথাও ভয়ে ভয়ে চুনকাম করতে পারলেও সেখানে দেখা যাচ্ছে, শাসক দলের লোকজন এসে তাদের প্রার্থীদের নাম লিখে দিয়ে যাচ্ছে। এমনকী, বহু দেওয়ালে নিজেরা স্রেফ চুনকাম করে আটকে রেখেছে, যাতে আমরা সেখানে না লিখতে পারি। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দেওয়ালের লেখার উপরে কাদা লেপে দিয়েছে।’’ স্পর্শকাতর বা অতি স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ তুলছেন তাঁরা।

কুলপি বিধানসভা কেন্দ্রের ঢোলাহাট বেশ কয়েকটি বুথে, রাজারামপুর পঞ্চায়েতের হেলেগাছি বুথে দেওয়াল লেখায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, চকবৈদ্যপুর, ঈশ্বরীপুর, বাবুরমহল ও রায়তলা এলাকায় কোথাও কোথাও চুনকাম করার পরে শাসক দলের লোকজন তাদের প্রার্থীর নামই লিখে দিয়েছে। সিপিএম প্রার্থী রেজাউল হক খাঁ অভিযোগ করছেন, শাসক দলকে ভোট না দিলে সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে, এই মর্মে বাড়ি বাড়ি ভয় দেখান হচ্ছে। ইন্দিরা আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা, ডিজিটাল রেশন কার্ডের তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

মগরাহাটের পূর্ব বিধানসভার উড়েলচাঁদপুর, আমড়াতলা, নৈনান ও মগরাহাট পঞ্চিম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেওয়াল লেখার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। উড়েল‌চাঁদপুরের মাঝিপাড়া ও আবাদ ঈশ্বরীপুর বুথে বিরোধীদের দেওয়াল লেখার অনুমতি দিতে ভয় পাচ্ছেন বাড়ির মালিকেরা। বামেরা দেওয়ালে চুনকাম করলেও সেখানে শাসক দলের প্রার্থীর নাম লেখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন সিপিএম প্রার্থী চন্দন সাহা। তাঁর দাবি, এখন থেকেই ভোটারদের বুথে যেতে নিষেধ করছে শাসক দলের লোকজন। পুলিশ-প্রশাসন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করছে না বলেও তাঁর দাবি। সেই সঙ্গে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর এলাকায় আরও রুট মার্চ বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।

একই ধরনের অভিযোগ করছেন ফলতা বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিধান পাড়ুই। ক’দিন আগে আবার জয়নগর বিধানসভা কেন্দ্রে এসইউসি প্রার্থী তরুণ নস্করের নামের দেওয়াল লিখনের উপরে কাদা লেপে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে।

ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী বিধিভঙ্গের ১৯৭টি অভিযোগ পেয়েছি। তার মধ্যে ১৮২টি অভিযোগের নিস্পত্তি হয়ে গিয়েছে। তবে তার মধ্যে দেওয়াল লিখন সংক্রান্ত অভিযোগ কটি সেটা বলা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন