ঠুনকো: ফুঁসছে গঙ্গা। ভাঙন ঠেকাতে অসহায় বাসিন্দাদের ভরসা ত্রিপল, দড়ি। মঙ্গলবার খড়দহে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রস্তুতিই সার! গঙ্গার ভাঙন আটকাতে কোমর বেঁধে নেমেও কাজ শুরু করতে পারল না প্রশাসন। কারণ, জোয়ারের জল সমানে বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এখন এমনই যে, লরি-বোঝাই বালির বস্তা আর শালখুঁটি নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর অপেক্ষায় বসে রইলেন শ্রমিকেরা। কিন্তু একটি খুঁটিও পোঁতা গেল না। সেচ দফতর সূত্রের খবর, এই অবস্থায় কাজ শুরু করা কার্যত অসম্ভব।
এ দিকে, মেরামতির কাজ শুরু না হওয়ায় আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছেন খড়দহের ক্যাম্প ঘাট এলাকার গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা। রবিবার রাতেই ক্যাম্প ঘাট ও বাবাজি ঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় জলের তোড়ে ঝুপ ঝুপ করে ধসে পড়েছিল গঙ্গার ইটে বাঁধানো পাড়ের একাংশ। সেই আওয়াজ পেয়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা দেখতে পান, পাড় ভাঙতে ভাঙতে আগ্রাসী গঙ্গা প্রায় দোরগোড়ায় এসে গিয়েছে। এ ভাবে ভাঙন চলতে থাকলে অচিরেই এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে চলে যাবে। কিন্তু বিপদের প্রমাদ গোনা ছাড়া তখন আর কিছুই করার ছিল না তাঁদের।
পরদিন সকাল হতেই স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে ঘর বাঁচানোর আকুতি জানাতে শুরু করেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পুরসভা নোটিস পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়, বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ঘর ছেড়ে দিতে হবে বাসিন্দাদের। তার পরে সোমবার রাতেও ফের পাড়ের কিছুটা অংশ ভেঙে তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। যার ফলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে ভাঙনের খবর ও ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরেই সেচ দফতর তড়িঘড়ি মেরামতির কাজে উদ্যোগী হয়। কিন্তু শুরু করতে গিয়েও আটকে যায় কাজ। এক লরি শালখুঁটি, বালির বস্তা গঙ্গার ধারে মাঠের মধ্যে দিনভর ফেলে রেখে
বসে থাকেন শ্রমিকেরা। কিন্তু জোয়ারের জল বাড়তে থাকায় কাজ শুরুই করতে পারেননি তাঁরা। সেচ বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাঙন ধরা অংশের গায়েই বহুতল। একচিলতে জায়গাও নেই যেখানে যন্ত্র দিয়ে শালখুঁটি পোঁতা যায়। আর দিনভর গঙ্গা যেমন উত্তাল, তাতে কোনও মানুষের পক্ষে নেমেও সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। আমাদের একটু অপেক্ষা করতেই হবে।’’
ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বহুতলের বাসিন্দা গৌরগোপাল পাল এবং পাশের একটি বাড়ির অভিষেক দাস বলেন, ‘‘আতঙ্ক তো তাড়া করছে বটেই। সোমবার রাতেও নতুন করে পাড় ধসে গিয়েছে। ধসে যাওয়া অংশে পুরসভার তরফে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে কি আর এ রকম ধস আটকানো যায়? যত ক্ষণ না বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে, রাতে ঘুমোতে পারছি না।’’ মঙ্গলবারের রাতটা কী ভাবে কাটবে, তা নিয়ে এখন থেকেই আতঙ্কে তাঁরা। রাত জাগারও পরিকল্পনা করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
ভাঙন ঠেকাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ শুরু হলেও গঙ্গার ধারের এই বসতি নিয়ে পুরসভাকেই দুষেছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমরা দায়বদ্ধ মানবিকতার স্বার্থে। তাই খবর পাওয়া মাত্র বাঁধ বাঁচানোর কাজ শুরু করতে বলেছি। কিন্তু পুরসভা কী করে ওখানে বহুতলের অনুমতি দিল? চন্দননগর থেকে শিক্ষা নিয়েই সমস্ত পুরসভাকে বলেছিলাম, নদী থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ হবে না। হলে তা বেআইনি।’’
খড়দহ পুরসভার তরফে অবশ্য সব নির্মাণই আগের বোর্ডের আমলের বলে দাবি করা হয়েছে। আপাতত পরিবারগুলিকে বাঁচানোর পরে এ নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথাও জানান স্থানীয় পুর প্রতিনিধিরা। জল কমলে বুধবার সকাল থেকেই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সেচ আধিকারিকেরা।