শুধুই দাঁড়িয়ে রয়েছে পিলার। ভরসা নৌকাই। হাসনাবাদে তোলা নিজস্ব চিত্র।
হাসনাবাদে কাঠাখালি সেতু আদৌ হবে তো, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই এলাকার মানুষের মনে এই প্রশ্ন এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে।
তার অবশ্য কারণও আছে বিস্তর। বাম আমলে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঠাখালির উপর সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল। কথা মতো তিন বছরের মধ্যে শেষ করার পরিবর্তে ছ’বছর পরে জানা যায়, জলের মধ্যে তৈরি দু’টি পিলার অকেজো। পিলার দু’টি ভেঙে ফেলে নতুন করে তিনটি পিলার করতে হবে। খরচ বেড়ে ৮০ কোটি টাকা ছাড়ায়। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।
শোনা যাচ্ছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাসনাবাদ সেতুর বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। প্রায়ই ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করছেন। ঠিক হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নবান্ন থেকে নতুন সেতুর কাজের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এটাই যা আশার কথা। কিন্তু সেই সেতু আদৌ হবে কিনা, হলেও কবে, তা নিয়ে এখনও সংশয়ে এলাকার মানুষ।
২০১২ সালে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৎকালীন পূর্ত ও সড়ক দফতরের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার হাসনাবাদে এসে বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে সেতুর উদ্বোধন করা হবে। এরপরেও কাঠাখালি নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। সেতু হয়নি।
সুন্দরবন এলাকার মানুষের কাছে হাসনাবাদ সেতু জীবনের স্পন্দন। সেতু হলে ওই এলাকার জনজীবনের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। দেশ বিদেশের পর্যটকরা কলকাতা থেকে এক গাড়িতে করে সুন্দরবনের অনেকটা কাছে পৌঁছতে পারবেন। তা ছাড়া, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ অসুস্থদের নিয়ে নেবুখালি থেকে সরাসরি বসিরহাট জেলা হাসপাতাল কিংবা কলকাতায় যেতে পারবেন। নৌকার উপর ভরসা না করে গাড়িতে করে সব্জি-ফসল নিয়ে শহরের বাজারে সময় মতো পৌঁছতেও পারবেন। এতে আখেরে এলাকার গরিব মানুষ উপকৃত হবেন। তা ছাড়া পর্যটন শিল্প বাড়লেও এলাকার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ার আশা।
কংগ্রেস নেতা তথা টাকি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘ন’বছর আগে সেতুর কাজ শুরু হলেও কবে তা শেষ হবে, কেউ জানে না। ফলে এলাকার ব্যবসায়ী এবং নিত্যযাত্রীদের বড় রকম অসুবিধা হচ্ছে।’’ গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিতা মণ্ডল, কাজল পাল, অঞ্জন মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আমরা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বরাবরই অবহেলার পাত্র থেকে গেলাম। ভোটের সময়ে সব দলের নেতারা এক ফসলি এলাকাকে দু’ফসলি করার কথা বলেন। সুন্দরবনের সামসেরনগর পর্যন্ত রেল, হাসনাবাদে কাঠাখালি এবং নেবুখালিতে সাহেবখালি নদীর উপরে সেতুর কথা বলা হয়। কিন্তু ভোট মিটলে সব ভুলে যান।’’
বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবু তিন বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে উদ্বোধনের কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যেরও কথা ছিল, দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করবেন। অথচ এখনও হাসনাবাদ সেতুর কাজ নতুন করে শুরুই হল না। শুধু শুধু সেতু তৈরির খরচই বেড়ে চলেছে। আর হয়রান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’’ হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএম নেতা শক্তি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সেতুর জন্য জায়গা পরিষ্কার করতে আমাদের বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছিল। সে সব সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু হয়। দু’পাশের রাস্তা এবং জলের মধ্যে পিলারের কাজও অনেকটাই শেষ হয়। কিন্তু কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে এখন সেতুর কাজ শেষ করতে সময় নিচ্ছে।’’
টাকির পুরপ্রধান তৃণমূলের সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাম আমলে ঠিকাদার যে দু’টি পিলার করেছিল, বিশেষজ্ঞেরা তা বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এরপরে ইঞ্জিনিয়ারেরা নতুন করে নকতশা তৈরির পরে মুখ্যমন্ত্রী ৮ কোটিরও বেশি টাকা অনুমোদন করেছেন। টেন্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরাও এসে গিয়েছে। ভেসেল ঘাট সরানোর কাজ শেষ করে সেতুর কাজ শুরু হবে। বলে তাঁর দাবি।
বসিরহাট মহকুমা পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারাঙের কথায়, ‘‘হাসনাবাদ সেতুর নকশা পরিবর্তন করে দু’টির বদলে এ বার জলের মধ্যে তিনটি পিলার করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে। ঠিকাদার সংস্থাকে আগামী দু’বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।’’