প্রাপ্তি: পঞ্চায়েত থেকে মিলল গ্যাস ও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র
মাটির চুল্লিতে রান্না করাই দস্তুর। গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি চলে এ ভাবেই। রান্না করতে হিমসিম দশা কর্মীদের। তবে মাসখানেক ধরে দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতে ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এমন নজির প্রায় নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে দেওয়া হয়েছে গ্যাস সংযোগ। সঙ্গে অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডারও। তাতে সব দিক থেকেই নিরাপত্তা বেড়েছে শিশুদেরও। জগন্নাথ মন্দির ৩৯ নম্বর কেন্দ্রের দিদিমণি সন্ধ্যা দাস জানান, তাঁদের কেন্দ্রে ৪০ জন বাচ্চা এবং ৮ জন প্রসূতির রান্না হয়। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রগুলি থেকে পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন করার পরে তাঁদের এই সুবিধা দিয়েছে পঞ্চায়েত। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ভাল ভাবে এবং অল্প সময়ে রান্না হচ্ছে এখন। খরচও সাধ্যের মধ্যে।’’ তবে ভর্তুকি-দরে সিলিন্ডার দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও কেন্দ্রগুলি তা পায়নি।
কাকদ্বীপ মহকুমার প্রায় ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র কাঁচা বাড়িতে চলে। তবে পাকা বাড়িতে চলে এ রকম কেন্দ্রের সংখ্যাও কম নয়। এ রকম ব্যবস্থা কেন সেগুলিতেও চালু করা যাচ্ছে না? কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক রাহুল নাথ বলেন, ‘‘একটা নজির তৈরি করেছে দিগম্বরপুর। আমরা চেষ্টা করছি, এটিকে মডেল করে যাতে মহকুমার অন্য অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রেও গ্যাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়।’’
পাশের গ্রাম পশ্চিম শ্রীধরপুরের রামকৃষ্ণ স্মৃতি সঙ্ঘ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী চন্দনা শীলও গ্যাস পেয়ে খুশি। এই কেন্দ্রের উপরেও নির্ভর করে থাকে অনেক বাচ্চা, ও তাদের মায়েরা। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘বর্ষার সময়ে রান্নার কাজে খুবই অসুবিধা হতো। এ বার বর্ষায় সেই অসুবিধা থাকবে না।’’
ওই দু’টি গ্রাম ছাড়াও পঞ্চায়েতের রামনগর আবাদ, দক্ষিণ দুর্গাপুর, গুরুদাসপুর গ্রামের এ রকম ১৯টি কেন্দ্রেই এখন গ্যাসে রান্না হয়। পঞ্চায়েতে ৪০টির মধ্যে এখন পাকা বাড়ি রয়েছে ১৯টি কেন্দ্রের। সেই সব কেন্দ্রগুলিকেই গ্যাস, এবং আগুন নেভানোর সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চায়েত প্রধান রবীন্দ্রনাথ বেরার কথায়, ‘‘ছোট ছোট বাচ্চাদের ধোঁয়ায় প্রচুর সমস্যা হতো। চোখের সমস্যা-সহ নানা রকম মুশকিল ছিল। দূষণ হচ্ছিল। সেটারই একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা দিয়ে কেন্দ্রগুলিতে ওভেন, এককালীন ভর্তি সিলিন্ডার এবং অগ্নি নির্বাপণ সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে।’’
জৈব চাষ, বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দল তৈরি করার মতো কাজে এগিয়ে রয়েছে দিগম্বরপুর। এ বার এই সাফল্যকেও একশো শতাংশ করতে চাইছেন পঞ্চায়েতের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, যে কেন্দ্রগুলি এখন পাকা নয়, সেগুলির পাকা বাড়িঘর করে ফেলার জন্য ব্লকের কাছে আবেদন করা হবে। যাতে তারাও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায়।