মৃত্যুর পরে জানা গেল পজ়িটিভ

এই পরিস্থিতিরই শিকার হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির চকদুলালপুরের এক বাসিন্দা। তাঁর এক ভাই ক’দিন আগে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কুলপি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৫:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা-আবহে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কোথায় রোগীকে নিয়ে যাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না রোগীর পরিবার। কাছের হাসপাতালে না নিয়ে দূরের হাসপাতালে যাওয়ার ফলেও বাড়ছে ভোগান্তি। অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বেড মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিরই শিকার হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির চকদুলালপুরের এক বাসিন্দা। তাঁর এক ভাই ক’দিন আগে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন। আর এক ভাই এখনও এমআর বাঙুরে ভর্তি। বুধবার রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে অবশ্য জোকা বা এমআর বাঙুরে প্রথমেই নিয়ে যাননি পরিবারের লোকজন। বরং ইএম বাইপাসের ধারে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করেন মেজো ভাই। অভিযোগ, কোথাও বেড মেলেনি। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে এমআর বাঙুর এবং এসএসকেএম হাসপাতালও ‘বেড নেই’ বলে ফিরিয়ে দিলে অসুস্থ দাদাকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে যান ভাই। সেখানে ভর্তি করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান ওই ব্যক্তি। সকালেই রিপোর্ট আসে, তিনি করোনা পজ়িটিভ ছিলেন।

মৃতের ভাই নিজে কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালের কর্মী। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে পরিচিত অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাও কেউ যেতে রাজি হননি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ নিজে অপটু হাতে অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে দাদাকে নিয়ে তিনি কলকাতায় আসেন।

Advertisement

১৩ তারিখ জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে তাঁর দাদাকে ভর্তি করা হয়েছিল কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালেই। সেখানে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে দু’দিন ভর্তি রেখে চিকিৎসকেরা গৃহনিভৃতবাসে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু বুধবার রাতে দাদার শরীর খারাপ হওয়ায় কেন আগে সেখানেই নিয়ে গেলেন না? মেজোভাই জানান, দাদার রোগের উপসর্গ কোভিডের মতো ছিল। কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালে সেই চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই।

কিন্তু তা হলে জোকা বা এমআর বাঙুরে কোভিড হাসপাতালে আগে গেলেন না কেন? ভাই বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, যে ভাবে যত টাকা লাগুক, দাদাকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাব।’’

তাঁর অভিযোগ, ইএম বাইপাসের ধারের তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল বেড নেই বলে জানিয়ে দেয়। তিনি অবশ্য রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে রেখে দু’টি জায়গায় কার্যত দরজা থেকেই কথা বলে ফিরে আসেন। তবে মৃতের ভাই জানান, প্রথমে যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে ভিতরে বসতে বলা হয়েছিল। দাদা ছিলেন বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে। কিছুক্ষণ পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, বেড নেই।

ভাইয়ের দাবি, বৃহস্পতিবার ভোর সওয়া ৪টে নাগাদ এমআর বাঙুর গেলে সেখানে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বাস্থ্যভবনের অনুমোদন ছাড়া ভর্তি নেওয়া যাবে না। ইমার্জেন্সির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষীরা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। ভোর ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ তাঁরা যান এসএসকেএম হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানে ইমার্জেন্সিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দেন, রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না। বেড নেই। এনআরএসে নিয়ে যেতে মৌখিক ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভাইয়ের কথায়, ‘‘সে সময়ে আর মাথা কাজ করছিল না। অসহায় লাগছিল।’’ অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁরা পৌঁছন ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। ভর্তি নেওয়া হয় রোগীকে। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ সেখানেই মারা যান তিনি। মৃতের ভাইয়ের কথায়, ‘‘কোথাও কোভিড পজ়িটিভ ধরে নিয়ে বলা হয়েছে ভর্তি নেওয়া যাবে না, বেড নেই। কোথাও পজ়িটিভ রির্পোট দেখাতে না পারায় ভর্তি করানো হয়নি।’’

মৃতের পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য মেলেনি। এসএসকেএম হাসপাতালের একটূ সূত্র জানাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট নিয়ে এলে সচরাচর রোগীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘ওই রোগীকে আগেই আমি জানিয়েছিলাম এখানে ভর্তি করাতে। কিন্তু ওঁরা তা না করে কলকাতায় নিয়ে যান। যখন এখানে আনা হল, ততক্ষণে অবস্থা খুবই খারাপ।’’

এ ধরনের পরিস্থিতিতে রোগীকে নিয়ে কী করবেন বাড়ির লোক?

দেবাশিস স্পষ্ট জানান, এ ক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে আসা উচিত। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা দেখে যা বলবেন, সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি, ভোগান্তি বাড়বে না বলেও তাঁর মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন