—প্রতীকী ছবি
সংখ্যার এমন তারতম্যে চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই।
৮২০ থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসে হয়েছিল ৭০১। আশা জেগেছিল স্বাস্থ্য কর্তা-সহ অনেকেরই মনে। সেই আশা আরও দৃঢ় হয়েছিল পর পর তিন দিন এই সংখ্যা সাতশোর ঘরে থাকায়। কিন্তু সেই আশা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা এখন লাগাতার বাড়ছে। মাঝে সুস্থতার হার আশা জাগিয়েছিল। এখন সুস্থতার হারও নিম্নমুখী। স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, মানুষ সচেতন না হলে করোনার ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠকে উঠে এসেছে, হোম আইসোলেশনে থাকা উপসর্গহীন রোগীরা অবাধে ঘুরছেন। সচেতন ভাবেই তারা সংক্রমিত করছেন অন্যদের। জেলার মধ্যে ব্যারাকপুর এবং বনগাঁর ঊর্ধ্বগতি চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
১৪ নভেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮২০। পরের তিন দিন সেই সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি ছিল। ১৭ নভেম্বর সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৭১০। পরের দিনই সেই সংখ্যা প্রায় ১০০ বেড়ে এক লাফে ৮০৫-এ পৌঁছয়। তার পর থেকে সংক্রমিতের সংখ্যা লাগাতার বেড়ে চলেছে। এ মাসে এক দিন ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা সাতশোর ঘরে নামেনি। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করেছেন, আমজনতার সচেতনতা না ফিরলে শুধুমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপে করোনার ঊর্ধ্বগতি রোখা মুশকিল। এর আগে এই জেলায় আলাদা করে লকডাউন করা হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন পুরসভা নিজের মতো করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করেছে। কিন্তু করোনার রেখচিত্রে লাগাম দেওয়া যায়নি। এখন কোন পথে করোনার মোকাবিলা করা হবে, তা স্বাস্থ্যকর্তারা ভেবে পাচ্ছেন না।
সংক্রমণে কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে পড়শি এই জেলাটি। তার মধ্যে সংক্রমণে উপরের দিকে রয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পুরসভা। একই সঙ্গে গত দু’সপ্তাহে কপালে ভাঁজ ফেলেছে বনগাঁ মহকুমায় সংক্রমিতের ঊর্ধ্বগতি। বসিরহাট মহকুমায় আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস না হলেও কয়েকটি এলাকায় সংক্রমণ আপাতত কম বলে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুজোর বেশ কিছু আগে কয়েকটি এলাকায় লকডাউন করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই যে হয়নি, তার প্রমাণ মিলছে সংক্রমিতের সংখ্যায়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ব্যারাকপুর, বনগাঁ এবং বসিরহাট মহকুমার পুরসভাগুলিতে নভেম্বরে গড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৫-২০টি করে বেড়েছে। পুজোর পরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের। কোনও কোনও ওয়ার্ডে রোজই একাধিক আক্রান্তের সন্ধান মিলছে। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সপ্তাহ দেড়েক আগে জেলার সংক্রমণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তারপরে সংক্রমিতের সংখ্যা কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নাগরিকদের মধ্যে যে সচেতনতা ফেরেনি, তার নমুনা শুক্রবারও বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল। বহু মানুষকে মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। বাজারে-দোকানে দূরত্ববিধি শিকেয় উঠেছে। আমজনতার একাংশ চাইছেন, দিল্লির মতো এখানেও মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোলে মোটা টাকা জরিমানা করা হোক।