করোনা মোকাবিলায় সরকারি সিদ্ধান্ত
COVID-19

পল্লি চিকিৎসকদের কাজে লাগাবে সরকার, উঠছে বিমা চালুর দাবি

গ্রামীণ এলাকায় সাপে কাটা রোগী, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পল্লি চিকিৎসকেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

Advertisement

সামসুল হুদা 

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৭:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

গ্রাম বাংলায় করোনা মোকাবিলায় পল্লি চিকিৎসকদের সামিল করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই পল্লি চিকিৎসেকরা জানাচ্ছেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা বহু রোগীকে তাঁরা এমনিতেই গত দেড় বছর ধরে দেখছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করে চললেও সরকারি ভাবে তাঁদের এত দিন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি বলেই অভিযোগ।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এই মুহূর্তে প্রায় ৪৪০০ জন পল্লি চিকিৎসক কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গীয় গ্রামীণ চিকিৎসক সমিতির সংগঠন। সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে একবার ডেঙ্গি, ডায়েরিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশির উপরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। সে সময়ে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ চিকিৎসকেরা সেলাই করতে পারবেন না। স্যালাইন, ইঞ্জেকশন দিতে পারবেন না। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না। প্রয়োজন হলে রোগীকে ‘রেফার’ করার কথা বলা হয়েছিল। একবার সরকারি ভাবে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ চিকিৎসকদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা। অথচ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এ ধরনের কোনও প্রশিক্ষণ সরকারি ভাবে দেওয়া হয়নি।

গত বছর লকডাউনের সময় থেকে করোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের প্রশাসনের নির্দেশ মতো ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে সমিতি। সেই তথ্য সংগ্রহ করে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হচ্ছিল। সে সময়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল, গ্রামীণ চিকিৎসকদের করোনা যোদ্ধা হিসেবে শংসাপত্র দেওয়ার জন্য।

Advertisement

গ্রামীণ চিকিৎসক তথা বঙ্গীয় গ্রামীণ চিকিৎসক সমিতির রাজ্য সম্পাদক আমির আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু সরকারি ভাবে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। গ্রামীণ চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষা-সামগ্রী প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। গ্রামীণ চিকিৎসকদের করোনা-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিক সরকার।’’

এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পল্লি চিকিৎসকদের কী ভাবে কাজে লাগানো হবে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও সরকারি ভাবে নির্দেশিকা আসেনি। তবে যে সমস্ত গ্রামীণ চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করতে চান, তাঁরা কোভিড বিধি মেনে মানুষকে সচেতন করতে পারেন। আমাদের নির্দেশ মেনে তাঁরা কাজ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করতে পারি।’’

প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (পিএমপিএআই)রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। পিএমপিএআই-এর দাবি, গত বছর করোনার সময় থেকে গ্রামীণ চিকিৎসকদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার, সুরক্ষা কিট দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে সরককারকে। সেই সঙ্গে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হচ্ছে। এ জন্য গত বছর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্যভবনে। সে সময় থেকে গ্রামীণ চিকিৎসকদের ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আবেদন করা হয়। চিকিৎসা করতে গিয়ে করোনার আক্রান্ত হয়ে কোনও গ্রামীণ চিকিৎসক মারা গেলে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো তাঁদের বিমার ব্যবস্থা করা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবিও আছে।

গ্রামীণ চিকিৎসা পরিকাঠামোয় পল্লি চিকিৎসকদের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা মনে করেন, সরকারি ডাক্তারেরা যেখানে গ্রামাঞ্চলে যেতে হামেশাই অরাজি থাকেন, সেখানে গ্রামীণ চিকিৎসকদের তালিম দিলে তাঁরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন। সম্প্রতি গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় সাপে কাটা রোগী, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পল্লি চিকিৎসকেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার মুখ্য উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন সাংসদ তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, গ্রামীণ চিকিৎসকদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক। করোনা মোকাবিলায় পল্লি চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর কথা সরকার ঘোষণা করেছে। আমরা সে জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে এ বার পল্লি চিকিৎসকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।’’ বিমা চালুর দাবিও করেছেন তিনি। তরুণ বলেন, ‘‘সরকার যদি ওঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে না পারে, তা হলে আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রায় ১ লক্ষ গ্রামীণ চিকিৎসক আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্য কেউ যদি প্রশিক্ষণ নিতে চান, তা হলে আবেদন করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন