দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রোগের বাহক বেড়েছে

কাউন্সেলিং জরুরি থ্যালাসেমিয়া ঠেকাতে

প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে এখন ১ জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়া এই ছবি সামনে আসার পরেই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া কাউন্সেলিং শুরু করার তোড়জোর শুরু হয়েছে জেলায়।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪০
Share:

প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে এখন ১ জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়া এই ছবি সামনে আসার পরেই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া কাউন্সেলিং শুরু করার তোড়জোর শুরু হয়েছে জেলায়। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, রোগের জ্ঞান নিয়ে প্রচার না থাকার জন্যই এমন পরিস্থিতি। তাই মহকুমা তো বটেই, এমনকী ব্লক স্তরের গ্রামীণ হাসপাতালগুলি থেকেও ওই কাউন্সেলিং শীঘ্রই শুরু করতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। এই মুহূর্তে নথিভুক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা জেলায় প্রায় ১২০০।

Advertisement

কাকদ্বীপ ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার অধীনে। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জেলায় এই মুহূর্তে প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি থ্যালাসেমিয়া বহনকারী মানুষ রয়েছেন। দু’জন বহনকারীর বিয়ে হলে তাঁদের সন্তানের পক্ষে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এটা আটকানো খুব জরুরি।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, বাৎসরিক সমীক্ষায় ২০১৫ সালে বহনকারী মানুষের হার ১৮ শতাংশের একটু বেশি ছিল। ডিসেম্বর ২০১৬ সালের সমীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে জানা যায়, তা প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় প্রতি ৫ জন মানুষের একজন বাহক রয়েছেন এই জেলায়। জেলায় এই মুহূর্তে থ্যালাসেমিয়ার রক্ত ট্রান্সফিউশনের ব্যবস্থা থাকলেও কাউন্সেলিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। জীবাণু বহনকারী দম্পতির সন্তান হলে তার সরাসরি থ্যালাসেমিয়ায় হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ থাকে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকার বেশিরভাগ মানুষই এই ব্যাপারটি জানেন না, অথবা জেনেও গুরুত্ব দেন না। তাই বিয়ের আগে কাউন্সেলিং এবং রক্ত পরীক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।

কী বলা হবে কাউন্সেলিংয়ে?

Advertisement

জানা গিয়েছে, বহনকারী পাত্র-পাত্রী যাতে আগে নিজেদের থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করান। পজিটিভ হলে ডাক্তারের পরামর্শে সন্তান ধারণের পথে এগোন। কাকদ্বীপ মহকুমায় কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং সাগর গ্রামীণ হাসপাতালেই রক্ত সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে কেবলমাত্র ওই দু’টি জায়গা থেকেই ট্রান্সফিউশনের সুবিধা পান রোগীরা। কোনও ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বহনকারী কিনা, তা জানতে শিবির গড়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ হয় জেলায়। রক্তের পরীক্ষা করা হয় একমাত্র ডায়মন্ড হারবারেই। এ বার সেই শিবিরও গ্রামাঞ্চলেও বাড়াতে চান স্বাস্থ্যকর্তারা। লোকবল পেলে তা ব্লক স্তরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।

রাজ্য বিধানসভার পিটিশনস কমিটি থ্যালাসেমিয়ার বিষয়ে কী কী আইন প্রণয় করা যায়, সে জন্য ইতিমধ্যেই সমীক্ষা শুরু করেছে। কমিটির সদস্যেরা সম্প্রতি সাগর গ্রামীণ হাসপাতাল ঘুরে দেখেন। কমিটির চেয়ারম্যান তথা ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল রাজ্য থেকে পুরোপুরি ভাবে থ্যালাসেমিয়া দূর করা। কমিটির মনে হয়েছে, বিয়ের আগে কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া বহনকারী রোগীর সংখ্যা।’’ বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া টেস্ট ও বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছেন কমিটির সদস্যেরা। পরিবেশবিদ্যার মতো পাঠ্যক্রমেও থ্যালাসেমিয়ার প্রাথমিক জ্ঞানের বিষয়টি রাখার সুপারিশ বিধানসভার কাছে করতে পারে ওই কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন