বিক্রি করার উপায় নেই। নিজস্ব চিত্র।
চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে চার বস্তা আলুর বীজ কিনতে এসেছিলেন দেগঙ্গার আবদুল জলিল। কিন্তু খুচরোর অভাবে সেই বীজ কেনা হল না তাঁর। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের কাছে বীজ বিক্রি করতে পারছেন না।
৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর একই অবস্থা স্থানীয় হাদিপুরের বাসিন্দা গোলাম রসুল মণ্ডল নামে আরও এক চাষির। রবিবার হাটে আলুর বীজ কিনতে এসে খুচরো না থাকায় কিনতে পারেননি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পরে মুখ কালো করে ফিরতে হল তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পাঁচ বিঘে জমি আছে। তার মধ্যে দু’বিঘে জমিতে আলু চাষ করব বলে এ দিন বীজ কিনতে এসেছিলান। কিন্তু খুচরো না থাকায় কিনতে পারিনি।’’ গোলামের মতো পরিস্থিতি আরও বহু চাষির।
তপন পোদ্দার নামে এক বীজ ব্যবসায়ী জানান, পচে যাওয়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে অনেক সময় পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটই নেওয়া হচ্ছে। কারণ বীজ সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা নেই।
এখন খেতে আলু বীজ পোঁতার সময় চলছে। কিন্তু খুচরো টাকার অভাবে চাষিরা হাটে গিয়েও আলুর বীজ কিনতে পারছেন না। সমস্যায় পড়েছেন আলু বীজ বিক্রেতারাও। দেগঙ্গাতে সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। সেখানে বছরের এই সময় প্রায় দেড় মাস আলুর বীজ বিক্রির জন্য দোকান দেন ব্যবসায়ীরা। দূর দূরান্ত থেকে চাষিরা এখানে এসে আলু ও পেঁয়াজের বীজ নিয়ে যান।
এ বারও ব্যবসায়ীরা আলুর বীজ কিনে হাটে দোকান দিয়েছেন চাষিরা। কিন্তু বেচাকেনা শিকেয়। পিয়ার আলি মোল্লা নামে এক বীজ বিক্রেতা জানান, বছরের এই সময় পাঞ্জাব থেকে আলুর বীজ এনে বিক্রি করা হয়। প্রথমে আলুর বীজ হুগলির চাঁপাডাঙাতে আনা হয়। সেখান থেকে ব্যবসারীরা দেগঙ্গাতে নিয়ে আসেন হাটে বিক্রির জন্য।
এক ব্যবসায়ী জানান, দেড় মাস আলুর বীজ বিক্রি হয়। প্রতি হাটে কোনও কোনও বিক্রেতা ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এক বস্তা আলুর বীজের দাম হয় ৭০০ টাকা। তাতে প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম বীজ থাকে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় মোট আলু চাষ হয় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলার চাষিদের সরকারি ভাবে আলুর বীজ এখানে দেওয়া হয় না। জেলার কৃষি অধিকর্তা অরূপ দাস বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে সেটা শুনেছি। চাষিদের এখন ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আলুর বীজ লাগানোর সময় রয়েছে।’’ সেই আশাতেই রয়েছেন এখন রসুল, আবদুলরা।