জ্বর নিয়ে দিশেহারা বাগদার হরিতলা
Dengue

অনেকে যাচ্ছেন গুনিনের কাছেও

তবে স্বাস্থ্য দফতর খবর পেয়ে নড়ে বসেছে। বুধবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, একটি মন্দিরের পাশে চেয়ার টেবিল পেতে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ জ্বর নিয়ে সেখানে দেখাতে আসছেন। কিন্তু মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীরাই ভরসা ক্যাম্পে। চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বাগদা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৪
Share:

শিবির: ওষুধ দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন এক যুবক। ঘরে কাঁথার তলায় শুয়ে। রক্ত পরীক্ষা করেছেন? প্রশ্ন শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব মিলল, রক্ত পরীক্ষা আবার কেন? ওঝার কাছে গিয়েছিলাম। ঝাড়ফুঁক করে দিয়েছে। ভাল হয়ে যাব।’’

Advertisement

উত্তর শুনে থ। কিন্তু বাগদার বয়রা পঞ্চায়েতের হরিতলা এলাকায় জ্বর নিয়ে সচেতনতা এই পর্যায়েই রয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই শ’দেড়েক মানুষ জ্বরে আক্রান্ত। এমন পরিবার বাকি নেই, যেখানে একজন না একজন ভুগছেন জ্বরে। অনেকের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। ডেঙ্গিও ধরা পড়েছে। জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন দু’জন। তারপরেও পরিস্থিতি এখনও এমন।

গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে সরু এবড়ো খেবড়ো ইটের রাস্তা। দু’পাশে চোখে পড়ল ছোট-বড় ডোবা। সেখানে পাট পচানো হয়েছে। ওই জলে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রচুর মশা, লার্ভা। সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। চারিদিকে বন-জঙ্গল। বৃষ্টির জল জমে এখানে ওখানে। বাড়ির শৌচালয় বা পানীয় জলের কলের পাশে নিকাশি নালাতেও উড়ে বেড়াচ্ছে মশার পাল। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন জানালেন, ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে আগে কেউ আসেনি গ্রামে। তবে গ্রামের দু’জনের মৃত্যুর পরে আতঙ্ক আছে। যদিও জ্বর হলে কী করতে হবে, তা নিয়ে ধারণা নেই বেশির ভাগ মানুষের।

Advertisement

তবে স্বাস্থ্য দফতর খবর পেয়ে নড়ে বসেছে। বুধবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, একটি মন্দিরের পাশে চেয়ার টেবিল পেতে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ জ্বর নিয়ে সেখানে দেখাতে আসছেন। কিন্তু মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীরাই ভরসা ক্যাম্পে। চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য রক্তের নমুনা নেওয়া হচ্ছিল ক্যাম্পে। এক স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, এখনও পর্যন্ত কারও রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়নি।

এ দিন সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক ক্যাম্পে গিয়ে রোগী দেখেছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতির দিকে তাঁরা নজর রাখছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। গ্রামে ঘুরে গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক দুলাল বর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক কম। হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে এনে ক্যাম্পে পাঠাতে হবে।’’ বাগদার বিডিও শান্তনু ঘোষ জানিয়েছেন, ওই এলাকায় মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বর প্রতিরোধে কী করা উচিত, তা বোঝাচ্ছেন। ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে। চুন ও ব্লিচিং ছড়ানোর কাজও শুরু হয়েছে।

এলাকার বেশির ভাগ মানুষ খেতমজুরি, দিনমজুরি করেন। দিন কয়েক হল অনেকেরই রোগে ভুগে দুর্বল শরীরে কাজকর্ম বন্ধ। গ্রাম থেকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। জ্বর হলে এলাকার মানুষ প্রথমে হাতুড়ে চিকিৎসকের উপরে নির্ভর করেন। ঝাড়ফুঁকও করান। জ্বর নহাত না কমলে যান হাসপাতালে। আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে যাঁদের, এমন কেউ কেউ অবশ্য বনগাঁয় এসে ডাক্তার দেখিয়েছেন বলে জানালেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর হালদার সোমবার মারা গিয়েছে এনসেফেলাইটিসে। এ দিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বোন সুপ্রিয়াও জ্বরে পড়েছে। মা সুধাদেবী তাকে উঠোনে চেয়ারে বসিয়ে মাথায় জল ঢালছিলেন। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল, টোটো করে সুপ্রিয়াকে নিয়ে সুধাদেবী কোথাও যাচ্ছেন। বললেন, ‘‘মেয়ের জ্বরটা কমছে না। ওঝার কাছে যাচ্ছি। ছেলেটা মরে যাওয়ায় ভয় পেয়েছে। তারপরেই জ্বর এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন