অকাল বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেল শুঁটকি মাছ

গঙ্গাসাগরের শুঁটকি মাছের খামার ব্যবসায়ী আবদার মল্লিক। এ বার শুটকি মাছের ব্যবসায়ে তাঁর লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে পচে গিয়েছে অনেক শুঁটকি মাছ।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

সাগর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

অপচয়: ভিজেছে মাছ। নিজস্ব চিত্র

গঙ্গাসাগরের শুঁটকি মাছের খামার ব্যবসায়ী আবদার মল্লিক। এ বার শুটকি মাছের ব্যবসায়ে তাঁর লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে পচে গিয়েছে অনেক শুঁটকি মাছ।

Advertisement

ওই মৎস্যজীবীর মতো সাগর এবং নামখানায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন আরও অনেক প্রান্তিক মৎস্যজীবী। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি, এই বৃষ্টিতে এক একটি খামারে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির হিসেব শুরু করেছে মৎস্য দফতর। তার সঙ্গেই ক্ষতিপূরণের জন্যও আবেদন করতে বলা হয়েছে তাঁদের।

সাগর, নামখানার খামার (খটি) থেকে শুঁটকি মাছ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাজার পর্যন্ত যায়। শিয়ালদহ ছাড়াও বেশ কিছু মাছ যায় বাংলাদেশেও। কিন্তু এ বার মরসুম শুরুর মুখেই ধাক্কা খেলেন মৎস্যজীবীরা। আবদার বলেন, ‘‘টাকা পয়সার সমস্যা ছিল। তাই এ বার বেশ কিছু টাকা ধার করে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু এমন ক্ষতি আগে কখনও হয়নি।’’

Advertisement

পুজোর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় শুটকি মাছের উৎপাদন। সাগর ও নামখানা মিলিয়ে ১৪টি খটি সমিতির অধীনে বেশ কয়েকশো খটি রয়েছে। সাগরের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কাজ করেন এগুলিতে। বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকরাই শুঁটকি মাছ বাছার ক্ষেত্রে পটু।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল। তাও কেন এই ক্ষতি ঠেকানো গেল না? নামখানার কালীস্থানের এক খটি শ্রমিক গঙ্গাধর দাস বলেন, ‘‘পাশে কিছু ছোট ঝুপড়ি রয়েছে, সেখানে বৃষ্টির সময় কিছু মাছ তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে আর কতটা ক্ষতি ঠেকানো যাবে। বেশিরভাগই ধুয়ে গিয়েছে।’’ মৎস্যজীবীরা জানান, শুঁটকি মাছের জন্য মাছ ধরা হয় রোজ। সেগুলি শুকোতে কয়েকদিন সময় লাগে। তাই পূর্বাভাস থাকলেও শুকোতে দেওয়া মাছ তুলে ফেলা সম্ভব হয় না।

তা ছাড়াও, পূর্বাভাস যা বলা হয়েছিল, তার থেকে ঝড়ের দাপট অনেক বেশি ছিল। সাগরে কোনও গুদামঘর খটির সঙ্গে যুক্ত মৎস্যজীবীদের জন্য তৈরি করা যায়নি। মৎস্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সাগরে একটি গুদাম ঘর করার জন্য ইতিমধ্যেই মৎস্য দফতরের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, ‘‘নামখানার চেয়েও বেশি ক্ষতি সাগরের খটিগুলিতে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চলছে। বেশ কিছু ক্ষতিপূরণের আবেদন জমাও পড়েছে সেগুলি উপরমহলে পাঠানো হবে।’’ এখন খটির মাছ শুকোনো হয় মাটিতে সরু ফাঁসের জাল বিছিয়ে। কিন্তু তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। মৎস্য দফতর থেকে একটি করে বড় পাকা চাতাল তৈরির ব্যাপারেও চেষ্টা করা হচ্ছে।

দুর্গাপুজোর সময় নিম্নচাপের দাপট ছিল মারাত্মক। পুজো পার হওয়ার পর নিশ্চিন্তে ভোলা, লটে, পাতানের মতো মাছ খামারে শুকোতে দিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু কালীপুজোর আগের বৃষ্টি যে এতটা মারাত্মক হাওয়ার সঙ্গে বইবে, তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন