নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরাও
Bhangar

ভাঙড় বাজারে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষী

বাজারের ভিতরে পুলিশের কোনও নজরদারি চোখে পড়ল না।

Advertisement

সামসুল হুদা 

ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০৩:০১
Share:

আতঙ্কের-রাত: এখানেই খুন হয়েছিলেন সহিদ। নিজস্ব চিত্র

দিন কয়েক আগে ভাঙড় বাজারের সোনাপট্টিতে ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন এক নৈশপ্রহরী। ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার, ভাঙড় বাজার, ঘটকপুকুর বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে বোঝা গেল, জায়গাগুলি রাতের অন্ধকারে কতটা অসুরক্ষিত। দেখা গেল, প্রশাসনিক ভবন চত্বরও রাতের বেলায় অরক্ষিতই থাকে।

Advertisement

বাসন্তী হাইওয়ে-লাগোয়া ঘটকপুকুর বাজার। বাজারের ভিতরে পুলিশের কোনও নজরদারি চোখে পড়ল না। রাতের অন্ধকারে বাসন্তী রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে একের পর এক ট্রাক। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা ঘটকপুকুর মোড়ে দু’জন লোক গরুর গাড়ি-সহ বিভিন্ন ট্রাক থেকে হাত বাড়িয়ে টাকা তুলছে বলে চোখে পড়ল।

বাসন্তী রাজ্য সড়ক-লাগোয়া ঘটকপুকুর বাজার ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে বড় বড় সোনার দোকান, কাপড়ের দোকান, পাইকারি দোকান আছে। বাজারের ভিতরে বিভিন্ন অলিগলি অন্ধকারে ঢাকা। সিসি ক্যামেরা নেই। বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ঘটকপুকুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মাত্র চারজন নৈশপ্রহরী। তাঁরা চারজন ডিএসপি ক্রাইমের অফিস-লাগোয়া একটি দোকানের সামনে বেঞ্চে গুটিসুটি হয়ে বসেছিলেন। বললেন, ‘‘এত বড় বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে আমরা মাত্র চারজন। বাজারে পুলিশ থাকে না।’’ তাঁরা আরও জানালেন, এর আগে সমস্যা হলে পাশের ক্রাইমের অফিসের কর্মীদের ডাকাডাকি করা হয়েছিল। কিন্তু সাড়াশব্দ মেলেনি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অফিস তালা বন্ধ। অনেক হাঁকডাক করেও কারও সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। যদিও সেখানে ডিএসপি ক্রাইম-সহ তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার কথা।

Advertisement

বেশ কিছুটা দূরে সিআই ভাঙড়ের অফিসে গিয়েও দেখা গেল, অফিস তালা বন্ধ। ওই অফিসে সিআই-সহ তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার কথা। হাঁকডাক করতে সিআই নিজেই বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘‘পুলিশের কাজ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। কোনও মানুষ যদি বিপদে পড়ে রাতে আমাদের ডাকেন, তা হলে অবশ্যই আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।’’

রাত ১টা ভাঙড় বাজারের সোনাপট্টিতে ঢুকতেই দু’জন রাইফেলধারী পুলিশ ‘কে কে’ বলে এগিয়ে এলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে এই বাজারেই ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন নৈশপ্রহরী সহিদ মোল্লা। সে দিন রাতে দুষ্কৃতীরা যে দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল, সেই দোকান-সহ মাত্র কয়েকটি দোকানের সামনে ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে আলোর ব্যবস্থা করলেও অধিকাংশ বাজার অন্ধকারে ঢাকা। ওই ঘটনার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বাজারের সোনাপট্টিতে দু’জন রাইফেলধারী পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নিযুক্ত ছ’জন নৈশপ্রহরী ভয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গেল। আপাতত রাইফেলধারী ২ জন মাত্র পুলিশ কর্মী ভরসা। তাঁরা অবশ্য শুধু সোনাপট্টিতে গয়নার দোকানগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে। অথচ এই বাজারে রয়েছে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন ধরনের বড় পাইকারি ও খুচরো দোকান। অতীতে এই বাজারে একাধিকবার ডাকাতি হয়েছে। বছর পঁচিশ আগে ডাকাত দলের হাতে এক দোকান মালিক-সহ তিনজন খুন হন। এত বড় ভাঙড় বাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও অসুরক্ষিত হয়ে পড়ায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। রাত পৌনে ২টো নাগাদ ভাঙড় থানার ওসিকে অবশ্য দেখা গেল, এলাকায় টহল সেরে ফিরছেন।

ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারে ব্যবসায়ী সমিতি নিযুক্ত চারজন নৈশপ্রহরী ছাড়া পুলিশের নজরদারি চোখে পড়ল না। ভাঙড় ১ ও ২ ব্লক প্রশাসনের অফিস, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এটিএম কাউন্টার, স্কুল-কলেজ সহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলির সামনেও রক্ষী চোখে পড়ল না।

বিজয়গঞ্জ বাজারের উপরেই রয়েছে ভাঙড় ২ ব্লক প্রশাসনের অফিস, ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি অফিস। ব্লক প্রশাসনের অফিসে গিয়ে দেখা গেল, কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। ব্লক অফিসের সামনে সাংসদ সুগত বসুর অর্থানুকুল্যে আধুনিক আলো লাগানো হয়েছে। যদিও তা দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ওই আলো জ্বললে বিস্তীর্ণ এলাকা আলোকিত হয়ে থাকে। তাতে মানুষের ভরসা বাড়ে। কিন্তু আপাতত সেই উপায় নেই। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ব্লক প্রশাসনের দফতর-সংলগ্ন এলাকায় মদ-গাঁজার আসর বসে বলে অভিযোগ। ঘটকপুকুর বাজার কমিটির চেয়ারম্যান তথা ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কাইজার আহমেদ বলেন, ‘‘ঘটকপুকুর বাজারে পর্যাপ্ত আলো নেই, এ কথা ঠিক। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই ব্যবস্থা করা হবে। ব্যবসায়ী সমিতি ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা দেখা হবে।’’ ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, ‘‘ভাঙড়, ঘটকপুকুর বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে পুলিশ ও ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

ডিএসপি ক্রাইম সৌমানন্দ সরকার জানান, এমনিতেই পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী নেই। তাঁর অফিসেও কর্মী কম। থানার সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে বাজারে পুলিশের টহলদারি বাড়ানো যায়, তা দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন