এ ভাবেই আবর্জনায় বুজে আছে নালা। বি টি রোডে। — নিজস্ব চিত্র
কোথাও নিকাশি নালা নেই। কোথাও আবার নালা থাকলেও আবর্জনা জমে তার মুখ বন্ধ। ফলে জল বেরোনোর উপায় নেই। এমনকী, শীতের মরসুমেও নিকাশি নালার জল আটকে বাজার উপচে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আরও অভিযোগ, বহু আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্কের জল বেরোতে না পেরে ঢুকে গিয়েছে আশপাশের দোকানে।
উপরের ছবিটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের। নিকাশির সমস্যায় জেরবার সেখানকার পুরসভাগুলি। প্রমাদ গুনছে প্রশাসনও। গত পাঁচ বছরে শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন বিলকান্দা, বন্দিপুর, পাতুলিয়া, পঞ্চায়েত এলাকায় ছোট কারখানা তৈরি হয়েছে প্রচুর। মাথা তুলেছে অনেক বহুতলও। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার হয়নি। ফল ভুগছে গোটা শিল্পাঞ্চলই। বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ছে বি টি রোডের মতো রাস্তাও। ওই রাস্তা বরাবর হাইড্রান্টগুলি সংস্কার হলেও কিছু দিন বাদেই ফের বুজে গিয়েছে।
কামারহাটি, পানিহাটির মতো নিচু পুর-এলাকাগুলিতে বর্ষায় পুরসভার পাম্প চালিয়ে জমা জল বার করা ছাড়া বছরভর নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না রাখা সমস্যার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি, বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকেও দুষছেন পরিবেশবিদেরা। নিকাশি-সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার ২৪টি পুরসভাকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও প্রশাসনের কর্তারা। এর মধ্যে ১৪টি পুরসভাই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত। সেই পুর-এলাকাগুলিতে নিকাশি ও বর্জ্য-সমস্যা নিয়ে সমীক্ষা করেছে মহকুমা প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, নিকাশি নালার মুখে ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক জমার কারণে জল বেরোনোর রাস্তা বন্ধ। ফলে মশার উৎপাত তো বাড়ছেই। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যাচ্ছে। পুরসভাগুলির চেয়ারম্যানরাও জানিয়েছেন, প্লাস্টিক সমস্যা রাহুর মতো গ্রাস করেছে সংলগ্ন এলাকাগুলিকে। টিটাগড় পুর-এলাকা মাত্র তিন বর্গ কিলোমিটারের। সেখানকার চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘এইটুকু জায়গাতেই প্রায় দেড় লক্ষ লোকের বাস। অনেকটা জায়গায় শুধু কুলি লাইন। নিকাশি নালা পরিষ্কার রাখা নিয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে করতে আমরা ক্লান্ত। পুরসভারও এত সাফাইকর্মী নেই। বসতি বাড়লেও নর্দমা বাড়ানোর জায়গা নেই। তবু আপ্রাণ চেষ্টা করছি এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে।’’
অভিযোগ, ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড়ে বহু আবাসনের নিকাশি-জল বেরোতে না পেরে ঢুকে যায় এলাকার দোকানে। পুর চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে নালার উপর দিয়েই ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই নর্দমায় কোনও বর্জ্য আটকে জল বেরোতে না পারলে বর্ষার আগে বোঝা যায় না। সমস্যা হয় তখনই।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বর্জ্য ফেলার বিষয়ে পুরসভাগুলিকে আরও সচেতন হতে হবে। তবে অনেক বেশি সচেতনতা দরকার নাগরিকদের। নইলে এই বর্জ্যই নরক-যন্ত্রণার কারণ হবে।’’
নিকাশি নালায় বর্জ্য জমার ফলেই যে সমস্যা আরও বেড়েছে, তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারাও। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘বর্জ্য ও জঞ্জাল যাতে পুরসভা কাজে লাগাতে পারে, সে জন্য আরও বেশি করে কম্প্যাক্টর বসাচ্ছি। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে।’’