দোকানে ঝোলানো চুড়িদারে চোখ আটকে যায় বাবার

একটু ধীরে সুস্থে চলতে পারে না ওরা! পুরনো কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝেই শব্দগুলো বিড় বিড় করছিলেন নির্মল বিশ্বাস। বেপরোয়া অটো ছুটে আসতে দেখলেই বুক কাঁপে তাঁর। ন’বছরের মেয়েকে হারিয়েছেন কয়েক মাস আগে, সেই বেপরোয়া অটোর ধাক্কাতেই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বাগদা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

একটু ধীরে সুস্থে চলতে পারে না ওরা!

Advertisement

পুরনো কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝেই শব্দগুলো বিড় বিড় করছিলেন নির্মল বিশ্বাস। বেপরোয়া অটো ছুটে আসতে দেখলেই বুক কাঁপে তাঁর। ন’বছরের মেয়েকে হারিয়েছেন কয়েক মাস আগে, সেই বেপরোয়া অটোর ধাক্কাতেই।

বাগদার হেলেঞ্চা-দল্লফুলিয়া সড়কের পাশে খুপরি ঘর নির্মলবাবুদের। ঢিল ছোড়া দূরত্বে চরমণ্ডল বাজারে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। কিন্তু বিশ্বাস বাড়ির ছবিটা দম বন্ধ করা। জীবনটাই যেন থমকে গিয়েছে সকলের।

Advertisement

ঘটনাটা এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের। সন্ধের দিকে বাড়ির পাশে রাস্তার উল্টো দিকে একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল নির্মলবাবু মেজো মেয়ে নিরঞ্জনা। খেলতে খেলতে রাস্তার উপরে চলে আসে। দু’টো অটো ঠেসে লোক তুলে হু হু করে ছুটছিল হেলেঞ্চার দিকে। প্রথম অটোটির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটা। পিছন থেকে অন্য অটোটি তার নরম শরীরের উপর দিয়ে চলে যায়।

সৌরভ বিশ্বাস নামে তৃতীয় শ্রেণির এক বালকও অটোর ধাক্কায় জখম হয়েছিল। নিরঞ্জনাকে বাঁচানো না গেলেও সৌরভকে কলকাতা থেকে ভেলোর নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে ফিরিয়ে এনেছেন গ্রামের মানুষ। গ্রামবাসীরাই চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

সে সব কথা বলতে বলতেই সন্তানহারা পিতার মনে পড়ে, ‘‘গতবারও তিন মেয়েকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম। আর এ বার সব কেমন অন্য রকম হয়ে গেল।’’ বললেন, ‘‘এ বার হয় তো বাড়ি বসেই ঢাকের আওয়াজ কানে আসবে। মনে মনে ঠাকুরকে বলব, ‘‘অটোর রেষারেষি বন্ধ হোক। আর যেন কারও এ ভাবে প্রাণ না যায়।’’ একই প্রার্থনা থাকবে তাঁরও, চোখের জল মুছে জানালেন নিরঞ্জনার মা কৃপাদেবী।

সেই প্রার্থনা কতটা পৌঁছবে দেবীর কানে, জানে না কেউ। নিরঞ্জনার মৃত্যুর পরেও ওই রাস্তায় অটোর ধাক্কায় জখম হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। মঙ্গলবারও অটোর ধাক্কায় জখম হয়েছেন একজন।

পুজোর আগে এখন দোকানে বাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত উৎসবপ্রিয় বাঙালি। আর পেশায় রাজমিস্ত্রি নির্মলবাবু বললেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোতেই ইচ্ছে করে না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অনেক সময়ে দোকানের দিকে চোখ পড়ে। মেজো মেয়েটার বয়সী মেয়েদের চুড়িদারের দিকে চোখ আটকে যায়। নিজেকে তখন সামলাতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন