পাশেই তৈরি হয়েছে ভেড়ি, দফারফা নদীবাঁধের

বাঁধভাঙা জলে ফি-বছর গ্রাম ভাসছে। তবু মেছোভেড়ির রমরমা বন্ধ হচ্ছে কই! সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রাম আতাপুর। সন্দেশখালি-২ ব্লকের মনিপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত ৮ বছরে অন্তত ১২ বার বড় কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:৫২
Share:

সন্দেশখালিতে এ ভাবেই নদীর জল ঢোকানো হচ্ছে। (ডান দিকে) আতাপুরেও একই চিত্র । নিজস্ব চিত্র।

বাঁধভাঙা জলে ফি-বছর গ্রাম ভাসছে। তবু মেছোভেড়ির রমরমা বন্ধ হচ্ছে কই!

Advertisement

সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রাম আতাপুর। সন্দেশখালি-২ ব্লকের মনিপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, গত ৮ বছরে অন্তত ১২ বার বড় কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আয়লার সময়ে বাঁধভাঙা জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। কেন এতবার বাঁধ ভাঙছে?

সেচ দফতর বলছে, কারণ যত্রতত্র মেছোভেড়ি। ওই গ্রামের প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমিতে মেছোভেড়ি করে মাছ চাষ হয়। বাঁধের দু’পাশেই জল। ফলে, বাঁধের মাটি আলগা হয়। নদীবাঁধ দ্রুত নষ্ট হয়। তবে, শুধু আতাপুরই নয়। নদীবাঁধ লাগোয়া ভেড়ির জন্য সুন্দরবন এলাকার নদীবাঁধ যে বারবার ভাঙে তা মানছেন সরকারি কর্তা এবং পরিবেশপ্রেমীরা।

Advertisement

রাজ্য সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদীবাঁধ থেকে অন্তত ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে তবেই ভেড়ি বানানো উচিত। তা না হওয়ার কারণেই বিপত্তি হচ্ছে। বাঁধের দু’পাশে জল থাকার কারণে বাঁধ মেরামতিতে দেরি হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে যদি বাঁধের বিশেষ জায়গা থেকে জল নিয়ে ভেড়ি করা হলে সরকার রাজস্ব পাবে, লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।’’

বারবার গ্রাম ভাসলেও কেন ভেড়ি তৈরি বন্ধ হয় না? এর উত্তরে সন্দেশখালি-২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য সুনীল পড়ুয়া বলেন, ‘‘এখানকার প্রায় ৮ হাজার মানুষ জীবিকার জন্য মাছ চাষকে বেছে নিচ্ছেন। ভেড়ি বন্ধ হবে কী করে?’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে সুন্দরবন এলাকায় নদীবাঁধ রয়েছে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বাঁধ লাগোয়া এলাকাতে পরিকল্পনাহীন ভাবে মেছোভেড়ি করা হয়েছে। যার বেসির ভাগেরই সরকারি লাইসেন্স নেই।

ভেড়িতে মাছ চাষের জন্য সাধারণত তিনটি উপায়ে নোনা জল নেওয়া হয়— ১) বাঁধের নীচে ফুটো করে পাইপ ঢুকিয়ে নদীর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। ২) সরাসরি বাঁধ কেটে। ৩) সেচ দফতরের স্লুইচ গেট ব্যবহার করে। তিনটি পদ্ধতিই নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সেচ কর্তাদের বক্তব্য, জীবিকার প্রযোজনে মানুষ ভেড়ি করতেই পারেন। তবে তা করতে হবে নিয়ম মেনে। তার পরিবর্তে বাঁধের গা ঘেঁষে ভেড়ি হচ্ছে। প্রতিদিন দু’বার জোয়ার–ভাঁটায় প্রায় সাড়ে ৫ মিটার করে জল বাড়ায় বাঁধের বড় রকম ক্ষতি হয়। যার ফলে সদ্য তৈরি বাঁধ হঠাৎ করে বসে যাচ্ছে। এ সব ছাড়াও আছে বৃষ্টি। আছে ম্যানগ্রোভ না লাগানোর প্রবণতা। ফলে মাটি খইছে। আর গোদের উপরে বিষফোঁড়া হল মেছোভেড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন