সাতাশ বছরেও ‘সাবালক’ হয়ে উঠল না সংহতি

অনেকক্ষণ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক মহিলা। একের পর এক ট্রেন যাচ্ছে। কিন্তু ওই স্টেশনে থামছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর ওই মহিলা জানতে পারেন এই স্টেশনে সব ট্রেন দাঁড়ায় না। বাধ্য হয়ে তাঁকে ভ্যান ধরে অন্য স্টেশনে যেতে হল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

যাত্রীরও দেখা নেই। —নিজস্ব চিত্র।

অনেকক্ষণ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক মহিলা। একের পর এক ট্রেন যাচ্ছে। কিন্তু ওই স্টেশনে থামছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর ওই মহিলা জানতে পারেন এই স্টেশনে সব ট্রেন দাঁড়ায় না। বাধ্য হয়ে তাঁকে ভ্যান ধরে অন্য স্টেশনে যেতে হল।

Advertisement

বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার সংহতি রেল স্টেশনের নিত্য যাত্রীরা প্রায়ই এমন সমস্যায় পড়েন। অনেক ট্রেনই দাঁড়ায় না এখানে। যাত্রীরা জানালেন, একবার ট্রেন মিস করলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ফের ট্রেন আসে।

পরিকাঠামোগত দিক থেকেও পিছিয়ে এই স্টেশন। ওই শাখার সব স্টেশনের রিটার্ন টিকিট পাওয়া যায় না। কম্পিউটারচালিত টিকিটের ব্যবস্থাও নেই। ট্রেন ঢোকার সময়ে মাইকে ঘোষণা করা হয় না। রাতের দিকে স্টেশন চত্বরের বেশ কিছু আলো বন্ধ থাকে। জুয়া ও মদের ঠেক বসে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

Advertisement

সব ক’টি ট্রেন সংহতি স্টেশনে যাতে থামে, সেই দাবি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছে সংহতি স্টেশনের ‘রেল যাত্রী সমিতি।’ এই দাবিতে পূর্ব রেলের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তাঁরা। রেলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও দাবি মেটেনি। সমিতির সম্পাদক অরুণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘‘সংহতি স্টেশনটির এ বারে ২৭ বছর পূরণ হল। কিন্তু গোবরডাঙা ও বনগাঁ লোকাল ছাড়া কোনও ট্রেন দাঁড়ায় না।’’

যাত্রী সমিতির দাবি, প্রত্যেক বছর ট্রেনের টাইম টেবিল তৈরির আগে পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে সমস্ত শাখার যাত্রী সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা হয়। সেখানে উপস্থিত থেকে প্রত্যেক বছরই সংহতি রেল যাত্রী সমিতির পক্ষ থেকে তাদের দাবি জানায়। প্রতিবারই একই প্রতিশ্রুতি দেয় রেল, জানালেন সমিতির সদস্যেরা।

সংহতি এলাকাটি হাবরা থানার অন্তর্গত। ট্রেনে করে হাবরা যেতে সংহতি স্টেশন থেকে সময় লাগে সাড়ে ৪ মিনিট। ট্রেনের এই সমস্যা থাকায় মানুষকে সড়ক পথে হাবরায় যেতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষেও বটে। রেল যাত্রী সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, রোজ ওই স্টেশন দিয়ে প্রায় হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। নানা প্রয়োজনে তাঁদের বারাসত ও কলকাতা যেতে হয়। সব ট্রেন না দাঁড়ানোয় তাঁদের হাবরা বা মছলন্দপুর স্টেশনে নেমে পড়তে হয়। সেখান থেকে গাড়ি করে ফিরতে হয়। বেশি রাত হয়ে গেলে গাড়ি পেতেও সমস্যা হয়। সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া গোনার ঝক্কি তো আছেই!

সংহতি, ফুলতলা, সালতিয়া, বাউগাছি, পায়রাগাছি, উলুডাঙার মতো বেশ কিছু গ্রামের মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা ওই স্টেশন। হাবরা শ্রীচৈতন্য কলেজ ও গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে এখান থেকে বহু পড়ুয়া যাতায়াত করেন। তাঁদেরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। অরুণবাবু বলেন, ‘‘আপ শিয়ালদহ-বনগাঁ সকাল ও বিকেলের দু’টি লোকাল ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতেই হবে এই স্টেশনে।’’

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘বছরের মাঝপথে ট্রেন দাঁড় করানো নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তবে অক্টোবরে যখন ট্রেনের নতুন টাইম টেবিল তৈরি হবে, তখন সংহতির বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।’’

রেলের এক কর্তা জানান, টিকিট বিক্রির টাকার অঙ্কের উপরে নির্ভর করে কোন স্টেশনে সব ট্রেন দাঁড়াবে কিনা। সংহত্রি ক্ষেত্রে টিকিট বিক্রির কী পরিস্থিতি, তা খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন