‘দাদা’র হাতে টাকা দিয়ে ভুগছে পড়ুয়া

এ দিকে, অ্যাডমিট হাতে না পেয়ে  পড়ুয়ারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,  পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারপরেও সমস্যা মেটেনি। এ বার পড়ুয়ারা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪২
Share:

শ্রীচৈতন্য কলেজ। নিজস্ব চিত্র

প্রথম বর্ষের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড আসেনি। ফলে অশোকনগরের শ্রীচৈতন্য কলেজের বেশ কিছু পড়ুয়া পরীক্ষা দিতে পারেননি। অভিযোগ, পড়ুয়ারা ছাত্র সংসদের ‘দাদা’দের কাছে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফর্ম পূরণের টাকা দিয়েছিলেন। সেই ‘দাদা’রা এখন মানতেই চাইছেন না, টাকা তাঁদের হাতে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

তাতেই এই বিপত্তি।

এ দিকে, অ্যাডমিট হাতে না পেয়ে পড়ুয়ারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারপরেও সমস্যা মেটেনি। এ বার পড়ুয়ারা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। সোমবার ৯ জন অশোকনগর থানায় লিখিত ভাবে গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাডমিট পাননি একশোর বেশি পড়ুয়া। তাঁরা প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে জুন মাসে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ফের নতুন করে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য কলেজে চলে গিয়েছেন। এখন সমস্যা রয়েছে ৩৫ জন পড়ুয়ার।

Advertisement

চন্দ্রিকা বিশ্বাস নামে এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কলেজ থেকে যদি তাঁদের জানায়, কলেজ কর্তৃপক্ষের ত্রুটির জন্য অ্যাডমিট মেলেনি, তা হলে তাঁরা পদক্ষেপ করবেন।’’

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁদের অ্যাডমিট আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চেষ্টা চলছে সমস্যা মেটানোর।’’ পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তপন দত্ত অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। ছাত্রছাত্রীদের দাবি যদি সত্যিও হয়, তা হলেও কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পড়ুয়ারা কলেজ অফিসে টাকা জমা না দিয়ে অন্যদের হাতে টাকা দিতে গেলেন কেন? তাঁদের উপরে কি অন্য চাপ ছিল?

পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাঁরা যে ছাত্র সংসদের ‘দাদা’দের কাছে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য টাকা দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও প্রমাণ নেই। আর সে কারণে সংসদের ছেলেরা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করছেন।

কয়েকজন পড়ুয়ার কথায়, ‘‘দাদারা বলেছিল, অ্যাডমিট পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া, কিছু টাকা ছাড় মিলেছিল।’’ পড়ুয়ারা জানালেন, কেউ ১২০০, ১৬০০, ১৮০০ টাকা জমা দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট ফি আরও বেশি ছিল। কিন্তু ওই ‘দাদা’দের এত ভরসা করার কারণ কী?

ভুক্তভোগীদের যুক্তি, ভর্তির সময়ে ওই সব দাদারা অনেকে অনেক রকম সাহায্য করেছিলেন। এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে দেখতাম, ওরাই কলেজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে সর্বত্র ওদের অবাধ বিচরণ। ভেবেছিলাম, টাকা দিলে কাজ হয়ে যাবে। এখন বুঝতে পারছি, ভুল করেছিলাম।’’ টাকা দেওয়ার কোনও রসিদ তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন ওই পড়ুয়ারা।

কলেজে এখন কোনও ছাত্র সংসদ নেই। আগে ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে। ছাত্র সংসদের অফিসটি এখনও তাদেরই দখলে। সদস্যেরা নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করেন। ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ থেকে পড়ুয়াদের কাছ থেকে কোনও বিষয়ে টাকা নেওয়া হয় না। আমাদের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নয়। পড়ুয়ারা আমাদের জানাক, কারা টাকা নিয়েছে। আমরা পদক্ষেপ করব। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’’

অশোকনগরের ছাত্রনেতা পাপন সরকারের বক্তব্য, ‘‘বাইরের ছেলেদের পড়ুয়ারা কেন টাকা দেবেন? ওঁরা তো ক্যাশ কাউন্টারেই টাকা জমা দিতে পারতেন।’’ তবে যদি কেউ যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, তবে শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন