লুঙ্গি-ফতুয়ায় ক্রেতা সেজে বমাল প্রতারক ধরল পুলিশ

গ্রামের রাস্তা দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে এগিয়ে আসছিলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। পরনে লুঙ্গি এবং ফতুয়া। রাম-লক্ষ্ণণ-সীতার ছবি আঁকা কয়েকটি মুদ্রা নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন একজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:০০
Share:

উদ্ধার হওয়া মুদ্রা। ইনসেটে, ধৃত শম্ভু নস্কর। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামের রাস্তা দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে এগিয়ে আসছিলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। পরনে লুঙ্গি এবং ফতুয়া। রাম-লক্ষ্ণণ-সীতার ছবি আঁকা কয়েকটি মুদ্রা নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন একজন। পথ আটকে জানালেন, তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময়েই ওই ‘প্রাচীন’ মুদ্রাগুলি পেয়েছেন। বাজারে এর দাম অনেক বেশি। কিন্তু তিনি ২-৩ হাজার টাকা পেলেই সেগুলি বিক্রি করে দেবেন।

Advertisement

কয়েক মিনিটের দরাদরি।

তারপর সেই মুদ্রা বিক্রেতাকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়িতে তুললেন সেই মাঝবয়সী। পরে জানা গেল, ওই মুদ্রা বিক্রতা আসলে একজন প্রতারক। প্রাচীন বলে দাবি করে হাল আমলে তৈরি নকল মুদ্রা বিক্রি করাই তার কাজ। লুঙ্গি এবং ফতুয়া পরিহিত মাঝবয়সী ব্যক্তিটি বসিরহাট থানার পুলিশ কর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শম্ভু নস্কর। বাড়ি বসিরহাটের ছোট জিরাকপুরে। তার থেকে রাম-লক্ষ্ণণ-সীতার ছবি দেওয়া কয়েকটি নকল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বসিরহাট স্টেশন এবং টাকি রোড সংলগ্ন এলাকায় শম্ভু এবং তার দলবল এই মুদ্রা জালিয়াতি শুরু করেছিল। ধৃত শম্ভু ছিল এই দলের মাথা। দলের বাকিরা তাকে ‘মাস্টার’ বলে ডাকত। জাল মুদ্রাগুলি নিয়ে ঘোরাফেরা করত। লোক বুঝে মুদ্রাগুলির দাম বলত। দলের বাকিরা কিছুটা দূরত্বে অপেক্ষা করত। শম্ভু নিজেকে রাজমিস্ত্রি দিয়ে পরিচয় বলত, সেগুলিরগুলির বাজারমূল্য লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কয়েক হাজারেই বিক্রি করে দিতে রাজি। কেউ মুদ্রা কিনতে রাজি না হলে তাঁকে মারধর করে টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে এই দলটির বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে যে মুদ্রাগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি সবই নকল। মূলত শিয়ালদহে এই ধরনের মুদ্রা তৈরি হলেও সম্প্রতি বসিরহাটেও এগুলি তৈরি হচ্ছে। গত কয়েক মাসে এই চক্রের হাতে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশের কাছে এই নিয়ে অনেকগুলি অভিযোগ জমা পড়েছিল। প্রতারিতদের একজন শম্ভুর ছবি তুলে বসিরহাট থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তীর স্মার্ট ফোনে পাঠান। তারপরেই বসিরহাট স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় ফাঁদ পাতার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। এক জন পুলিশ কর্মী লুঙ্গি-ফতুয়া পরে হাতে টাকার বান্ডিল নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত শুরু করে। তারপরেই ‘রাজমিস্ত্রি’ হিসেবে মাস্টারের আগমন। ছবি থাকায় তাঁকে চিনতে ভুল করেননি ওই ছদ্মবেশী পুলিশ কর্মী। তারপরেই দরাদরি এবং গ্রেফতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন