ভুয়ো: ধৃত । নিজস্ব চিত্র
তাঁর লেটারহেড বলছে— তিনি ‘এমবিবিএস, এমডি, এফআরএসএইচ, এমআরএসএইচ’।
তিনি কোন কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, রয়েছে তারও উল্লেখ— ‘কার্ডিওলজি, মেডিসিন, ডায়াবেটিস, ব্রেন স্ট্রোক, ক্রিটিক্যাল কেয়ার’।
বছর খানেক আগে বছর উনচল্লিশের এমন এক ‘ডাক্তার’কে হাতের কাছে পেয়ে গোবরডাঙার মানুষ খুশিই হয়েছিলেন। এলাকার একমাত্র হাসপাতালটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চটজলদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেলে না। ফলে, সৌমেন দেবনাথ নামে ওই ‘চিকিৎসকের’ কাছে রোগীর ভিড় বাড়ছিলই। কিন্তু ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে শুক্রবার রাতে সৌমেনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত কবুল করেছেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যসোসিয়েশনের (আইএমএ) গোবরডাঙা শাখার সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র করের দাবি, ‘‘এমডি’র পুরো কথাটিও উনি বলতে পারেননি।’’
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রেশনটি ভুয়ো। ওই ব্যক্তির দেওয়া অন্য তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ধৃতকে শনিবার বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌমেনের বাড়ি হাবরার কামারথুবায়। প্রায় এক বছর আগে গোবরডাঙার কালীবাড়ি মোড় এলাকার একটি ওষুধের দোকানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখা শুরু করেন। কপালে লাল তিলক কেটে গাড়ি করে চেম্বারে আসতেন। রোগীদের থেকে ‘ফি’ নিতেন ৩০০ টাকা।
তাঁর লেটারহেড। নিজস্ব চিত্র
কয়েক মাস আগে এক রোগীর কাছ থেকে পাওয়া সৌমেনের প্রেসক্রিপশন দেখে সন্দেহ হয় আইএমএ-র নারায়ণবাবুর। তিনি জানান, ওই লেটারহেডে সৌমেনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল না। নারায়ণবাবু এ ব্যাপারে ওই ওষুধের দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসা করেন। কয়েকদিন পরে সেখানে সৌমেনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া লেটারহেড দেখতে পান। পুলিশ জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে সৌমেন তিন রকম লেটারহেড ছাপিয়েছেন।
নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে সার্চ করেও ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের হদিস মেলেনি। লেটারহেড বলছে, সৌমেন মুজফ্ফরপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করেছেন। কিন্তু ওই নামে কোনও মেডিক্যাল কলেজ নেই।’’ সৌমেনের লেটারহেড বলছে, তিনি কলকাতা ও বারাসতের তিনটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বারাসতের এখটি নার্সিংহোমের মালিক জানান, সৌমেন মাঝেমধ্যে সেখানে রোগী ভর্তি করাতেন। বিনিময়ে কমিশন পেতেন। খুঁটিনাটি সব জেনে শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণবাবু ওই ফার্মেসিতে গিয়ে সৌমেনকে চেপে ধরেন। নারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘সৌমেন তখন রোগীদের সামনে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে। এমডি’র পুরো কথাটি বলতে না-পারায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’’
গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত জানান, সৌমেন যে ওষুধের দোকানে বসতেন, সেখানে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কেন তারা খোঁজখবর না নিয়ে সেখানে তাঁকে রোগী দেখার অনুমতি দিয়েছিল।