Farmers Protest

খাল সংস্কারের দাবিতে অবরোধ

এলাকায় চাষের জন্য দীর্ঘদিন আগে সরকারি ভাবে ওই খাল খনন করা হয়েছিল। এখান থেকে সেচের জল তোলার জন্য তৎকালীন সময়ে আরএলআই স্কিমে পাম্প বসানো হয় খালের দু’পাশে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ১০:১০
Share:

দূষণ: এ ভাবেই খাটালের জল পড়ছে খালে (উপরে)। প্রতিবাদ জানিয়ে অবরোধ। ছবি: সামসুল হুদা

চাষের জন্য সেচের জল চাই। সে জন্য খাল সংস্কার জরুরি। খাল সংস্কারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার চাষিরা। দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না করার ফলে পলি পড়ে মজে গিয়েছে বলে অভিযোগ। খালেই দীর্ঘদিন ধরে এলাকার খাটালের গরুর গোবর, চোনা, খড়, বিচুলি-সহ আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সমস্যায় সেচ। এমনই অবস্থা ভাঙড় ২ ব্লকের চালতাবেড়িয়া থেকে চড়িশ্বর পর্যন্ত একটি সেচখালের।

Advertisement

এলাকায় চাষের জন্য দীর্ঘদিন আগে সরকারি ভাবে ওই খাল খনন করা হয়েছিল। এখান থেকে সেচের জল তোলার জন্য তৎকালীন সময়ে আরএলআই স্কিমে পাম্প বসানো হয় খালের দু’পাশে। ভাঙড়ের উর্বর জমিতে এমনিতেই তিন ফসলি চাষ হয়। সেচের জল দিয়ে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লঙ্কা, টমেটো, মুলো-সহ বিভিন্ন ধরনের আনাজ চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন বেগুন, পটল, উচ্ছে, কুমড়ো, ভেন্ডি-সহ বিভিন্ন ধরনের আনাজ চাষ হয়। চাষিদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই খাল সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে গত দু’তিন বছর ধরে খালে জল না থাকায় সেচের জল পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে মার খাচ্ছে চাষ। খাল সংস্কারের দাবিতে এবং বেআইনি খাটালের বিরুদ্ধে এলাকার চাষিরা শনি ও রবিবার ভাঙড়ের জিরেনগাছা গ্রামের বৈদ্য পাড়ায় রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। চাষিদের দাবি, অবিলম্বে অবৈধ খাটাল বন্ধ করতে হবে। বেআইনি খাটালের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত খাল সংস্কার করে চাষের জন্য সেচের জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় চাষি জামাত আলি মোল্লা বলেন, ‘‘আগে এই সমস্ত এলাকায় সারা বছরই খেত বিভিন্ন ধরনের আনাজ ভরে থাকত। যত দিন যাচ্ছে, সেচের জলের অভাবে চাষ মার খাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন আনাজ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে ওই খালের জলেই এলাকার সমস্ত চাষ হত। দীর্ঘদিন খাল সংস্কার না করার ফলে মজে গিয়েছে। অবিলম্বে খাল সংস্কার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে।’’ স্থানীয় আর এক চাষি মুজিবর মোল্লা বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, এলাকায় গজিয়ে উঠছে অবৈধ খাটাল। সেখানকার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। খাল আস্তে আস্তে মজে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে বেআইনি খাটাল বন্ধ করা।’’

চাষিদের আরও দাবি, ভাঙড়ের বামুনিয়া খালও এ ভাবে মজে গিয়েছে। বামুনিয়া খালের অন্য নাম ভাঙড় কাটা খাল। ওই খাল উল্টোডাঙা, কেষ্টপুর, সল্টলেক, মহিষবাথান, ভাঙড় হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে মিশেছে। ওই খালেরও দু’পাড়ে অসংখ্য অবৈধ খাটাল রয়েছে বলে অভিযোগ। একদিকে ভাঙড়ের এই সমস্ত খাল থেকে যেমন চাষের জন্য সেচের জল পাওয়া যায়, তেমনই জল নিকাশির বড় মাধ্যম। বামুনিয়া খাল মজে যাওয়ার ফলে প্রতি বছর বর্ষার সময়ে বামুনিয়া, চড়িশ্বর, কৃষ্ণমাটি-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা জলে ডুবে যায়। খাল সংস্কার না করার ফলে ভেঙে পড়েছে নিকাশি ব্যবস্থা।

Advertisement

চালতাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আবেদ আলি মোল্লা বলেন, ‘‘খালটি মজে যাওয়ায় সত্যি সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিডিওকে জানিয়েছি দ্রুত খাল সংস্কার করার জন্য।’’ ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ভাঙড়ের বাগজোলা খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বামুনিয়া খাল যাতে দ্রুত সংস্কার করা হয়, সে জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।’’

বিডিও আরও বলেন, ‘‘অবৈধ খাটালের বিরুদ্ধে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির খাটালগুলির বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। যে সমস্ত খাটালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন