কিছু দিন ধরেই বেলা ২টোয় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছিল কাউন্টারে। ১০০০ টাকা চাইলে ধরানো হচ্ছিল ২০০ টাকা। বলা হয়েছিল, সোমবার থেকে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কিন্তু ওই দিন থেকেই হাবরার ‘আবাদ-সোনাকেনিয়া এসকেইউএস লিমিটেড’ নামে সমবায় সমিতির অফিসে তালা বন্ধ। বাড়ি গিয়েও খোঁজ মেলেনি ম্যানেজার মহম্মদ কুদ্দুস মোল্লা ও তাঁর ছেলে, সমিতির ক্যাশিয়ার আজহারউদ্দিন মোল্লার। তাঁদের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। এলাকার লোকজন কুদ্দুসের স্ত্রী আজমিরাকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। টাকা আত্মসাতের ষড়ষন্ত্রে তিনিও সামিল, এমনই অভিযোগ গ্রাহকদের।
সমিতিতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ছিল বলে দাবি করেছেন গ্রাহকেরা। অভিযোগ, সবটাই লোপাট করেছেন বাবা-ছেলে। হাবরা ১ বিডিও শুভ্র নন্দী জানান, ওই সমবায় সমিতির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে হাবরা স্টেট কো-অপারেটিভে। কিন্তু সেখানে অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা মেলেনি। গোটা বিষয়টি তাঁরাও খতিয়ে দেখছেন।
হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের খোঁজে তল্লাশি চলছে। হাবরা ১ ব্লকের সমবায় ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর ঘোষও অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন।
সমিতির গ্রাহক-সংখ্যা হাজার দু’য়েক। এলাকাটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। চাষবাস ও খেত মজুরি বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা। ইদের আগে এত বড় বিপর্যয়ে ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। বুধবার কয়েকশো গ্রাহক হাবরা থানায় স্মারকলিপি জমা দেন। গ্রাহকদের চাপে ওই সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক মোল্লাও বুধবার সন্ধ্যায় হাবরা থানায় কুদ্দুস ও আজহারউদ্দিনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৩ সাল থেকে সমবায় সমিতিটি চলছে। অতীতে সমিতি থেকে শুধু কৃষি ঋণ দেওয়া হতো। ২০০৭ সালের পর থেকে তা বন্ধ। গ্রাহকেরা জানালেন, আট বছর আগে ওই সমিতিতে ব্যাঙ্কিং শাখা খোলা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা লেনদেনের জন্য সোনাকেনিয়া ও আবাদ গ্রামে দু’টি কাউন্টার খোলে। গ্রাহকেরা তাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতে শুরু করেন। প্রথম দিকে সব ঠিকঠাক চলছিল।
গ্রাহকেরা জানালেন, সমিতিতে প্রকাশ্যে কখনও ভোট হয়নি। কর্তৃপক্ষ নিজেরাই কমিটি গঠন করতেন। ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার গ্রাহকদের জমা রাখা টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে রেখে দিতেন।
পরিচালন কমিটির সভাপতি মাধবচন্দ্র সরখেল ও সম্পাদক রাজ্জাক মোল্লা পদাধিকারবলে ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারকে নিয়োগ করেছিলেন। সম্পাদক ও ম্যানেজারের নামে সমিতির যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সম্পাদকের দাবি, ‘‘আমাকে বলা হতো, সমিতির প্রয়োজনে টাকা তুলতে হবে। আমি চেকে সই করে দিতাম।’’
টাকা খোওয়ানোর আশঙ্কায় দিন গুণছেন মহম্মদ চাঁদ মিঞা, সফিকুল ইসলামরা। চাঁদ খেতমজুর। সফিকুল ছোট চাষি। দু’জনেই জানালেন, বহু কষ্টে সামান্য সঞ্চয় করেছিলেন। সে সব বেহাত হলে পথে বসতে হবে!