জ্বর নিয়ে জেরবার উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা
Dengue

জৌলুসহীন বাজিতপুর

গ্রামের অনেকের দাবি, মৃত্যু যা হয়েছে, ডেঙ্গিতেই। স্বাস্থ্য দফতর সে কথা মানেনি। বহু মানুষের বক্তব্য, ‘‘ধরে নিচ্ছি ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়নি। কিন্তু এতগুলো মানুষ কেন মারা গেল, সেটা জানতে তো কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না প্রশাসনের।’’

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৮
Share:

স্বজনহারা: জয়ন্ত গায়েন। — নিজস্ব চিত্র

দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর আনন্দ আগেই ম্লান হয়ে গিয়েছে। দীপাবলিতেও উজ্জ্বল হবে না গ্রাম, ধরেই নিয়েছেন মানুষজন।

Advertisement

জ্বর, জ্বর আর জ্বর— এখন শুধু এই নিয়েই আলোচনা বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামে। মাস দেড়েকের মধ্যে জনা সাতেকের মৃত্যু হয়েছে এই গ্রামে। মিঠু গায়েন জানালেন, একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় সকলেই আতঙ্কিত। গা গরম হলেই মৃত্যুভয় চেপে বসছে। পরিস্থিতি এমনই, নাতিদের নিয়ে ছেলে-বৌমা গ্রাম ছেড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে।

গ্রামের অনেকের দাবি, মৃত্যু যা হয়েছে, ডেঙ্গিতেই। স্বাস্থ্য দফতর সে কথা মানেনি। বহু মানুষের বক্তব্য, ‘‘ধরে নিচ্ছি ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়নি। কিন্তু এতগুলো মানুষ কেন মারা গেল, সেটা জানতে তো কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না প্রশাসনের।’’

Advertisement

বাদুড়িয়ার বহু গ্রামেই ঘরে ঘরে জ্বর। হাসপাতালের বেডে জায়গায় কুলোচ্ছে না। মেঝেতে শুয়ে অনেকে। বাজিতপুর গ্রামে চিকিৎসা শিবির বসেছে শনিবার। দিনভর লম্বা লাইন ছিল। সন্ধের পরেও রোগী দেখা হবে বলে জেনারেটর লাগাতে দেখা গেল স্থানীয় যুবকদের। মহেশ্বর বিশ্বাসের গত কয়েক দিন ধরে জ্বর। কোনও মতে বললেন, ‘‘প্রায় প্রতি বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বরে ভুগছে। কে কাকে সাহায্য করবে, তার ঠিক নেই। আত্মীয়-স্বজনেরা ভয়ে এ গ্রামে কারও বাড়ি আসা ছেড়ে দিয়েছেন।’’ জয়ন্ত গায়েনের কথায়, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর দিন বড়দা আর কাকিমা মারা গিয়েছেন। ছেলেটারও জ্বর এসেছিল। তবে বিজয়া দশমীতে বসিরহাট জেলা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।’’ ভারতী গায়েন, লক্ষ্মী গায়েন, গোপাল বিশ্বাসরা জানালেন, উৎসবের আনন্দ এ বার দেখাই গেল না গ্রামে। পাড়া-পড়শির ঘর থেকে কান্নার রোল উঠলে কী ভাবে আর গ্রামে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হবে। তাঁরা জানালেন, কালীপুজোটুকু নমো নমো করে করা হবে ঠিকই, তবে জৌলুসটুকু উধাও। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হচ্ছে না।

স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে গ্রামে ব্লিচিং এবং মশা মারার তেল স্প্রে ছড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেল। তবে তাতে কতটুকু কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে সকলে সন্দিহান। মহকুমা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন