আগুন নিয়ন্ত্রণের পরে ফের হাসপাতালে ফেরানো হচ্ছে রোগীদের। ছবি: দিলীপ নস্কর।
কেউ স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়ে পড়িমড়ি করে নামলেন সিঁড়ি বেয়ে। কেউ অসুস্থ শরীরে কোনও রকমে বেরোলেন বাইরে। এসেই কাতরাতে কাতরাতে শুয়ে প়ড়লেন মাঠে।
ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে সাত সকালে অগ্নিকাণ্ডের জেরে এমনই আতঙ্ক ছড়াল রোগী ও পরিজনের মধ্যে। পরে ডায়মন্ড হারবার দমকল কেন্দ্র থেকে কর্মীরা এসে আগুন আয়ত্তে আনেন।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জেলা হাসপাতাল’ হিসাবে ঘোষণার পরে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের পুরনো বাড়ির অদূরে নীল-সাদা রঙের ঝাঁ চকচকে চারতলা ভবন তৈরি হয়েছে। সেখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থাও হয়েছে। অস্থায়ী প্রসূতি বিভাগ, অর্থোপেডিক, ইএনটি, সার্জারি-সহ জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থাও চালু হয়েছে নতুন ভবন থেকে। চারতলা ভবনে ৩০০ জনেরও বেশি রোগী।
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ দোতলায় বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ডে আগুন লাগে। দমকলের অনুমান, শর্টসার্কিট থেকেই আগুন। দ্রুত সেই আগুনে চারতলা পর্যন্ত প্যানেলের তার ও প্যানেলের পাইপ পুড়ে যায়। হাসপাতালের সব দরজা তখনও খোলেনি। চারতলার দরজা খুলতেই কালো ধোঁয়া ও কটূ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে সারা হাসপাতালে। রোগীদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়।
বিপদ বুঝে মেন স্যুইচ নামিয়ে দেওয়া হয়। বিপদ ঘণ্টি বেজে ওঠে। রোগী ও রোগীর পরিজনেরা প্রাণভয়ে শয্যা ছেড়ে নীচে নেমে আসার চেষ্টা করেন। হুড়োহুড়িতে অনেকে পড়ে যান। নীচের তলায় নেমেও সমস্যা। হাসপাতালে সদর দরজা ছাড়া বাকিগুলি তখনও খোলা হয়নি। বোরোনোর জন্য শুরু হয় ঠেলাঠেলি।
অসুস্থ শরীরে কোনও মতে বেরিয়ে অনেকে হাঁপাতে হাঁপাতে শুয়ে পড়েন হাসপাতালেন সামনের মাঠে। কেউ কেউ আরও দূরে দৌড় দেন।
সায়ন্তনী মণ্ডল, বিভা কর্মকারেরা ভর্তি প্রসূতি বিভাগে। বললেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেছিলাম। হঠাৎ সাইরেন বাজতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে সারা ঘরে কালো ধোঁয়ার ভরে গেল। গন্ধে দম আটকে আসছিল। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে আমরা সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসি।’’ ঠেলাঠেলি, হুড়িহুড়িতে কারও হাতে নম্বর লাগানো ব্যান্ড খুলে গিয়েছে। কারও স্যালাইনের বোতল খোলা। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, সিঁড়িতে ওঠার মুখে কোথাও কোথাও রক্তের ছাপ। কোথাও ব্যান্ডেজ, গজ কাপড় পড়ে। রোগীদের থাকার সব ঘরই তখনও ফাঁকা।
ঘণ্টা দেড়েক পড়ে দমকল পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। পরে হাসপাতালের কর্মীরা মাঠে পড়ে থাকা রোগীদের স্ট্রেচারে, হুইল চেয়ারে করে এক একে ভিতরে নিয়ে যান। এ দিনের ঘটনার জেরে বহির্বিভাগে আসা রোগীরা অনেকে ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরে গিয়েছেন।
জেলা হাসপাতালে সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা গিয়েছে।’’