River dried up

নদী মজে যাওয়ায় পেশা বদলেছেন বহু মৎস্যজীবী

কোথাও পলি পড়ে, কচুরিপানার জঙ্গলে গতিপথ অবরুদ্ধ নদীর। কোথাও চলছে জবরদখল। কোথাও আবার নদীর জলেও মিশছে আর্সেনিক। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৯:৩২
Share:

পানা-ধরা নদীতে শখে মাছ ধরছে ছোটরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এক সময়ে খরস্রোতা ছিল নাওভাঙা। স্রোত ও নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কচুরিপানা আর আগাছায় মুখ ঢেকে উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদীটি বর্তমানে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

বছর তিরিশেক আগেও নদীতে জোয়ার-ভাটা খেলত। এলাকার বহু মানুষ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। চাষিরা নদীর জল সেচের কাজে লাগাতেন। নদীতে নৌকো চলত। প্রতিদিন নদী পেরিয়ে বহু মানুষ গন্তব্যে যেতেন। ক্রমশ নদী মজে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পলি জমে ফি বছর প্লাবন হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে চাষবাসেও।

বনগাঁ মহকুমার ভিড়ে গ্রামের কাঁটাখাল থেকে হরিদাসপুর-নরহরিপুর, খলিতপুরের মধ্যে দিয়ে নদীটি পেট্রাপোল-পিরোজপুর বাওড়ে গিয়ে পড়েছে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা বালি খালের মাধ্যমে ইছামতী নদীতে গিয়ে মিশেছে নাওভাঙা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীটি ১৪ কিলোমিটার লম্বা। অতীতে সারা বছর জল থাকত। গভীরতা থাকত প্রায় ২০ ফুটের মতো। বর্তমানে গরমের সময়ে জল নেমে যায় চার ফুটের নীচে। ফলে সেচের জল মেলে না বললেই চলে। বর্ষায় আবার উল্টো সমস্যা। পলি জমে নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নদী উপচে জলমগ্ন হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা, চাষের জমি।

Advertisement

ছয়ঘরিযা পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি কৃষিকাজ। এখন নদীটি চাষিদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন-চার ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত হয়েছে। এলাকার চাষিরা জানালেন, প্রতি বছর দুর্গা পুজোর আগে বর্ষায় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি জলের তলায় চলে যায়। ফসলের ক্ষতি হয়। জল সরতে মাস ছ’য়েক সময় লাগে। স্থানীয় চাষি কালীপদ সর্দার বলেন, ‘‘এখন জমিতে ধান ও পাট ছাড়া কিছু হয় না। আষাঢ় থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত জমিতে জল জমে থাকে, চাষবাস করা যায় না। এলাকার অর্থনীতিতে এর খারাপ প্রভাব পড়ছে।’’

খেদাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কচুরিপানা-আগাছা আর শ্যাওলায় নদী মুখ ঢেকেছে। তার মধ্যে আবার স্থানীয় কিছু মানুষ মাছ ধরার জন্য নদীতে বাঁশ-জাল ফেলেছেন। কালিয়ানি সেতু এলাকায় দেখা গেল, নদীর মধ্যে নৌকো, ডিঙি অকেজো হয়ে ডুবে আছে। হরিদাসপুর সেতুর কাছে গিয়ে দেখা গেল, যত দূর চোখ যায় কচুরিপানা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।

এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে নদীটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে নদীর একাংশ থেকে পলি তুলে সংস্কার করা হয়েছিল। যদিও তাতে নদীর হাল ফেরেনি। ফের নদীগর্ভে পলি জমে গিয়েছে। প্রবীণ মানুষদের কাছে নদীকে ঘিরে শৈশবের স্মৃতি এখনও টাটকা। সত্তর বছরের এক বৃদ্ধ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আগে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। বিক্রির পরেও বাড়িতে খাওয়ার জন্য মাছ থেকে যেত। রুই, কাতলা, শোল, মাগুর, পুঁটি-সহ নানা ধরনের মাছ পাওয়া যেত। বাংলাদেশ থেকে চাষিরা ধান-পাট এখানে নৌকোয় করে নিয়ে আসতেন।’’ তিনি জানান, এখন নদী মজে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা পেশা বদল করে খেতমজুরি, দিনমজুরি করেছেন। স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘বিয়ে করে নৌকোয় করেই শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলাম।’’

ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘২০১৭ সালে নদী সংস্কার করা হলেও হাল ফেরেনি। নাওভাঙা নদী যেখানে বাওড়ের মাধ্যমে ইছামতী নদীর সঙ্গে মিশেছে সেখানে সংস্কার করতে হবে। না হলে সমস্যা মিটবে না। আমরা সেচ দফতরের কাছে নদী থেকে কচুরিপানা ও পলি তোলার আবেদন করেছি।’’ সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাদের পরিকল্পনায় আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন