দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা থাকছিলেন কাঁচরাপাড়া শহরে। তাঁদের অনেকেই শহরের বাসিন্দাদের কাছে রীতিমতো পরিচিত মুখ। তেমন ন’জন আফগান নাগরিককে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ এবং বীজপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের অনেকের কাছেই এ দেশে থাকার বৈধ অনুমতি নেই। ইদানীং বেশ কয়েক জন তাঁদের ডেরায় আসা-যাওয়া করছিলেন। তাঁদের চালচলনও রীতিমতো সন্দেহজনক। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তাঁরা সুদের কারবারও চালাচ্ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম হল আব্দুল নাসির পাঠান, তাহির খান, আব্দুর সুকুর খান, জিয়াউদ্দিন খান, সালাম খান, সৈয়দ আরিফ, আব্দুল ওয়াকিল, আব্দুল সাত্তার খান, রহমতুল্লা আলি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে কয়েকটি আফগান পরিবার কাঁচরাপাড়া লক্ষ্মী সিনেমা হলের পাশে বসবাস করছে। তাঁদের অনেকেই সুদের করাবার করেন। সম্প্রতি কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের কছে খবর আসে, ওই আফগান নাগরিকদের ডেরায় অন্য কিছু লোকের আনাগোনা বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মহিলাও ছিলেন। জানা যায়, তাঁরা এসে দিন কয়েক কাটিয়ে ফের অন্যত্র চলে যান। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, যাঁরা ওই বাড়়িগুলিতে আসেন, তাঁদের কলকাতায় আরও কয়েকটি আফগান পরিবারের বাড়িতেও দেখা যায়।
ধৃতদের ফোনের কললিস্ট খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, সম্প্রতি তাঁরা আফগানিস্তানের কয়েকটি নম্বরে ঘনঘন ফোন করেছেন। তাঁদের কাছে যাঁরা আসছিলেন, তাঁদের কয়েক জন আফগানিস্তানের নাগরিক বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দা বিভাগ। তার পরেই কাঁচরাপাড়ার আফগান পরিবারগুলির উপরে নজরদারি শুরু হয়। তার পরেই বীজপুর থানার সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ যৌথ ভাবে তল্লাশি শুরু করে। মোট ন’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় আনা হয়। দেখা যায়, তাদের মধ্যে তিন জনের কোনও পাসপোর্ট নেই। আফগানিস্তানের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণপত্রও নেই তাঁদের কাছে। ১৮-২১ বছর বয়সি তিন তরুণের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্রই নেই। পুলিশের কাছে তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বসবাস করছেন। এমনকি, তাঁদের জন্মও এ দেশে। আফগানিস্তানের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্কই নেই। তা হলে তাঁদের নম্বর থেকে কেন ঘনঘন আফগানিস্তানে ফোন যেত? তাঁদের মায়েরাই বা কোথায়? এ সব প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর তাঁরা দিতে পারেননি বলে বক্তব্য পুলিশের। এর পরেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু কারা তাঁদের কাছে আসতেন, সে বিষয়েও কোনও জবাব তাঁদের কাছ থেকে মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে, তাঁদের মধ্যে পাখতুনিস্তানের নাগরিক রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ২) কে কান্নন বলেন, ‘‘ধৃতদের বিস্তারিত জেরার প্রয়োজন। তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে।’’