ঝোপ বুঝে কোপ মারতে গিয়ে শ্রীঘরে বাংলাদেশি

৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলে জেরবার গোটা দেশ। সীমান্তে বাংলাদেশিরাও এ দেশে আসতে গিয়ে হেনস্থা হচ্ছেন। যাতায়াতের সংখ্যাটাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে গত কয়েক দিনে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫২
Share:

পুলিশের জালে মিলটন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলে জেরবার গোটা দেশ। সীমান্তে বাংলাদেশিরাও এ দেশে আসতে গিয়ে হেনস্থা হচ্ছেন। যাতায়াতের সংখ্যাটাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে গত কয়েক দিনে। কিন্তু এই পরিস্থিতির ফয়দা তুলতে মাথা খাটিয়েছিল বাংলাদেশের এক জালিয়াত। ৫ হাজার টাকা ঠকিয়ে শেষমেশ অবশ্য ধরা পড়েছে সে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ধৃত মীর মহম্মদ মিলটনের বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মীরপুরে। বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে ৯ নভেম্বর পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এ দেশে ঢুকেছিল সে। পরিকল্পনামাফিক পৌঁছে যায় দেগঙ্গার শ্বেতপুরের এক বাড়িতে।

প্যান্ট-শার্ট পরা ধোপদূরস্ত চেহারার মিলটন ১০ তারিখ সকালে পৌঁছে যায় পেশায় চাষি বাবর আলির বাড়িতে। সে সময়ে বাড়ি ছিলেন না গৃহকর্তা। স্ত্রী জাহানারার সঙ্গে নানা অছিলায় কথাবার্তা জোড়ে মিলটন। কথায় কথায় জানায়, সে নামকরা গুনিন। ‘দিব্যদৃষ্টিতে’ সে দেখতে পাচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যেই ঘোর দুর্দিনে পড়তে চলেছে বাবর আলির পরিবার।

Advertisement

ঘাবড়ে যান গাঁয়ের বধূ জাহানারা বিবি। কিন্তু তাকে মিলটন বলে, কুছ পরোয়া নেই। শীঘ্রই সে অজমেঢ় শরিফে যাবে। সেখান থেকে মহিলার জন্য একটি তাবিজ আনতে পারে। ওই তাবিজ ধারণ করলে সমস্যার মুক্তি। কিন্তু এ জন্য লাগবে ৫ হাজার টাকা।

অনেক সাতপাঁচ ভেবে ওই যুবককে ১০টি বাতিল পাঁচশো টাকার নোটে ৫০০০ টাকা দিয়ে দেন জাহানারা। যাওয়ার আগে মিলটন বলে যায়, কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও কথাটা টের না পায়। তা হলে তাবিজের গুণ কাজে আসবে না।

টাকাটা দিয়ে দিলেও মনটা খচখচ করছিল জাহানারার। কথাটা চেপে থাকা ঠিক হবে না বলে মনে হয় তাঁর। সেই মতো স্বামীকে সব খুলে বলেন।

সব শুনে বাবরের তো মাথায় হাত। বাড়ি বয়ে ঠকাতে এসেছিল কেউ, বুঝে যান গৃহকর্তা। শুরু হয় মিলটনের খোঁজ।

রবিবার ফের ওই যুবককে গ্রামে ঘুরতে দেখেন জাহানারা। স্বামীকে জানান সে কথা। আশপাশের লোক জুটে যায়। দেগঙ্গা থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় মিলটন। বাবরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যুবকে বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। সোমবার বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে মিলটনকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবক সেপ্টেম্বর মাসে এ দেশে এসেছিল। নভেম্বর মাসে ফিরে যায়। কিন্তু ফের এল কেন এ দেশে?

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত যুবক জানিয়েছে, এখন ভারতে ৫০০-১০০০ টাকার পুরনো নোট অচল। অনেকে নানা কারণে পুরনো নোট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেলতে চাইবে না। এখন যদি মানুষকে বোকা বানিয়ে তাবিজ-কবজের কথা বলে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে মানুষজনের আপত্তি হবে না। টাকা খোয়া গেলেও কেউ খুব বেশি গায়ে মাখবে না। কালো টাকা খোওয়া গেলে কেউ পুলিশের কাছেও যাবে না!

কিন্তু পুরনো নোট নিয়ে সে চালাত কী করে? জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘দাঁড়ান, সবে তো হাতে এল। কেঁচো খুঁড়তে আর কী কী কেউটে বেরোয়, দেখি জেরা করে।’’ তবে ছোকরা ফন্দিটা মন্দ ফাঁদেনি, চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলে গেলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন