গলুর খুনের বিচার চেয়ে থানায় তরুণী

কে গলু, সরল প্রশ্ন অফিসারের। উত্তর মিলল, ‘‘আমার পোষা কুকুর স্যার। আমার প্রাণের থেকে প্রিয়। সন্তান-স্নেহে মানুষ করছিলাম ওকে।’’

Advertisement

সামসুল হুদা 

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৮
Share:

শোকার্ত: সারমেয়র দেহের সামনেই কান্না তরুণীর। নিজস্ব চিত্র

থানায় তখন ব্যস্ত ওসি, পুলিশ কর্মীরা। হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে ঢুকলেন এক তরুণী। ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন, ‘‘স্যার ওদের কাউকে ছেড়ে দেবেন না। ওরা আমার গলুকে মেরে ফেলেছে।’’

Advertisement

কে গলু, সরল প্রশ্ন অফিসারের। উত্তর মিলল, ‘‘আমার পোষা কুকুর স্যার। আমার প্রাণের থেকে প্রিয়। সন্তান-স্নেহে মানুষ করছিলাম ওকে।’’

বৃহস্পতিবার সকালে ক্যানিং থানায় এমন ঘটনায় চমকে যান ওসি আশিস দাস। গলুর মনিব লাবণী কয়াল তখনও কেঁদে চলেছেন। থানার বাইরে মোটর ভ্যানে প্লাস্টিকে মোড়া গলুর দেহ নিয়ে সটান থানায় হাজির তিনি। লাবণীর দাবি, প্রিয় পোষ্যটিকে বিনা কারণে পিটিয়ে মারা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। লাবণীর কথায়, ‘‘ওই দম্পতি গলুকে পছন্দ করত না। তাই এ ভাবে মেরে ফেলল।’’

Advertisement

কী ভাবে মৃত্যু হল প্রিয় পোষ্যের?

লাবণী জানান, মঙ্গলবার ক্যানিংয়ের তালদির রাজাপুরে তাঁর প্রতিবেশী দম্পতি লোহার হাতুড়ি দিয়ে গলুর মাথায় মারে। এরপরেই গলুর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। তালদির এক পশু চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়েছিল। তিনি ওষুধপত্র দেন। কিন্তু বুধবার মারা যায় গলু।

দেহ কবর দিয়েছিলেন লাবণী। তখনও হাতুড়ি দিয়ে মাথায় মারার কথা জানতেন না তিনি। পরে জানতে পেরেছেন, মাথায় ঘা খেয়েই গলু অসুস্থ হয়। পোষ্যের দেহ কবর থেকে তুলে নিয়ে ক্যানিংয়ে একটি পশুপ্রেমী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।

ওই সংস্থা থেকেই কুকুরের দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁদের বলা হয়, থানা থেকে না বললে ময়নাতদন্ত সম্ভব নয়। সেই মতো তাঁরা এ দিন সকালে গলুর দেহ নিয়ে ক্যানিং থানায় চলে আসেন। কিন্তু কোনও পশু চিকিৎসকের দেওয়া মৃত্যুর শংসাপত্র না পেলে তো ওই সারমেয়র দেহ ময়নাতদন্ত করা সম্ভব নয়। কে দেবে মৃত্যুর শংসাপত্র— তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন লাবণী।

পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শোকার্ত লাবণী বলেন, ‘‘গলু আর মলু নামে আমার দুই পোষ্য। আমি একমাস বয়স থেকে তাদের বড় করছি। চোখের সামনেই গলু মারা গেল। যারা আমার গলুকে খুন করেছে, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।’’

দিনের শেষে গলুর দেহ নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন লাবণী। সেখানেই বরফ দিয়ে রাখবেন বলে জানিয়েছেন। আজ, শুক্রবার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন