হঠাৎ তালা হোমে, অবরোধ

প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৯৪৮ সালে ধান্যকুড়িয়া জমিদারবাড়িতে বালিকা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ আলয় খোলা হয়েছিল। অনাথ মেয়েদের আবাসিক রেখে পড়াশোনা শুরু হয়। পরবর্তিতে জেলা পরিষদ ওই জমি কেনে। বর্তমানে সেখান ৮৫ জন দুঃস্থ এবং অনাথ মেয়ে পড়াশোনা করছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মাটিয়া শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৫
Share:

বিক্ষোভ: মাটিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

বই, খাতা, পোশাক আটকে রেখে হোম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে মেয়েদের। এই অভিযোগ তুলে, রাস্তা অবরোধ করে পরে বিক্ষোভ দেখাল তারা। জড়ো হন স্থানীয় মানুষজন, অভিভাবকেরাও। সোমবার দুপুরে বসিরহাট মহকুমার ধান্যকুড়িয়া বালিকা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ আলয়ের সামনে এই ঘটনায় ব্যস্ততম টাকি রাস্তা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তীব্র যানজট হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। আসেন বসিরহাট উত্তরের প্রাক্তন বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি। প্রয়োজনে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে, এই আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৯৪৮ সালে ধান্যকুড়িয়া জমিদারবাড়িতে বালিকা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ আলয় খোলা হয়েছিল। অনাথ মেয়েদের আবাসিক রেখে পড়াশোনা শুরু হয়। পরবর্তিতে জেলা পরিষদ ওই জমি কেনে। বর্তমানে সেখান ৮৫ জন দুঃস্থ এবং অনাথ মেয়ে পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে ১১ জনের এ বার মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার কথা।

সম্প্রতি জমিদার বাড়ি সংস্কারের কথা বলে সেখান থেকে আবাসিকদের স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা হয়। জানতে পেরে আন্দোলনে সোচ্চার হয় আবাসিকেরা। ছাত্রীদের আন্দোলনে পিছু হঠেন সরকারি আধিকারিকেরা।

Advertisement

তখনকার মতো বিষয়টি ধামাচাপা পড়েছিল। পুজোর ছুটির পরে পরিস্থিতি বদলায়। অভিভাবকদের পক্ষে ফতেমা গাজি, তানিয়া খাতুন, সালমা বিবি, মৌসুমী খাতুন, লতা দাস বলেন, ‘‘ছুটি পড়ায় ছাত্রীরা বাড়ি চলে যায়। সেই সুযোগে হোম কর্তৃপক্ষ ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ছুটির মেয়াদ শেষে দূর-দূরান্ত থেকে হোমে ফিরে মেয়েরা দেখে, সব বন্ধ। গেটে পাহারা দিচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার।’’ তাঁদের অভিযোগ, মেয়েদের বই-খাতা, বেডিং, স্কুলের পোশাকের কোনও হদিস নেই।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মারুফা খাতুন, মৌসুমী সরকার, ময়না দাসদের কথায়, ‘‘দূর থেকে এখানে যাতায়াতের অসুবিধার জন্য চার জন টেস্ট পরীক্ষায় বসতে পারেনি। আমরা কোনও রকমে এর ওর বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি। প্রথম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের তো পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে।’’ সকলের অভিযোগ, ভবন সংস্কারের নামে প্রতারণা করে হোম খালি করার চক্রান্ত চলছে। কয়েক জন ছাত্রী বলে, ‘‘গাইন গার্ডেনের ভগ্নদশার কারণে ২০১২ সালে আমাদের জন্য নতুন আবাসন তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই তো থাকতাম। তা হলে কেন মিথ্যা কথা বলে আমাদের অন্যত্র সরানো হচ্ছে?’’ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হোমের শিশু-সহ অভিভাবকেরা প্ল্যাকার্ড হাতে গাইন গার্ডেনের সামনে টাকি রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। এ বিষয়ে মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘কেন আবাসিকেরা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হল, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ঘর বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে হোমের সুপার সর্বাণী বর্মন বলেন, ‘‘সরকারি সিদ্ধান্তে কাজ করতে হচ্ছে। কেন হোম বন্ধ, তা ডিস্ট্রিক মাস এডুকেশন অফিসার উত্তম মণ্ডল বলতে পারবেন।’’ উত্তমের অবশ্য দাবি, ধান্যকুড়িয়ার ওই হোম সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি।

কার নির্দেশে হোম খালি করা হল, পুজোর ছুটিতে মেয়েদের অনুপস্থিতিতে কেন তালা ঝোলানো হল, মেয়েদের জিনিসপত্র কোথায় গেল, মেয়েদের বিকল্প থাকার ব্যবস্থা নিয়েই বা কী ভাবা হচ্ছে— কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর মেলেনি মহকুমা প্রশাসন বা হোমের আধিকারিকদের কাছে। পুরনো বাড়ি ভেঙে প্রোমোটারি করা হতে পারে আশঙ্কা স্থানীয় মানুষজন এবং অভিভাবকদের অনেকের। হোম যাতে সরানো না হয়, সে কথা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন বিধায়ক রনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন