বাবু, টিভিতে তোর নাম বলছে!

হঠাৎই নিজের একমাত্র ছেলে মৃন্ময়ের নামটা শুনে চমকে উঠলেন লিপিকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:৪৮
Share:

মায়ের-সঙ্গে: মিষ্টিমুখ ছেলেকে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সকালে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন লিপিকা মণ্ডল। টিভিতে তখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস একে একে মেধা তালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন।

Advertisement

হঠাৎই নিজের একমাত্র ছেলে মৃন্ময়ের নামটা শুনে চমকে উঠলেন লিপিকা। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে পাশের ঘরে থাকা ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘‘বাবু টিভিতে তোর নাম বলছে। তুই পরীক্ষায় থার্ড হয়েছিস।’’ মৃন্ময়ও অবাক। কারণ, এমনটা যে হতে পারে, তা নিজেও ভাবেননি।

তবে আশাতীত ভাবেই এ বার সে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯৮ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় রাজ্যে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন মৃন্ময়। বাংলায় পেয়েছেন ৮২, ইংরেজিতে ৯৭, বায়োলজিতে ৯৯, কেমিস্ট্রিতে ১০০ এবং পদার্থ বিজ্ঞানে পেয়েছেন ৯৯।

Advertisement

পদার্থ বিজ্ঞানই তার প্রিয় বিষয় বলে জানালেন গোবরডাঙা খাটুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মৃন্ময়। নিজের স্কুলে বরাবরই ভাল ফল করলেও কখনও প্রথম হননি। মাধ্যমিকে ৬৫৪ নম্বর পেয়ে ভাল ফল করলেও মেধা তালিকায় জায়গা পাননি।

স্বরূপনগরের পূবালি নিমতলা এলাকার আদি বাসিন্দা মৃন্ময় মা লিপিকার সঙ্গে থাকেন গোবরডাঙায় ভাড়াবাড়িতে। ছেলের লেখাপড়ার জন্যই বছর চারেক ধরে তাঁরা গোবরডাঙায় থাকছেন বলে জানালেন লিপিকা। বাবা তাপস মালয়েশিয়ায় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। যে টাকা রোজগার করেন, তাতে বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ সামলিয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয় লিপিকাকে। তাই নিজেও সেলাইয়ের কাজ করেন।

পাড়া-পড়শিদের ভিড়ে সোমবার সকাল থেকে উপচে পড়ছে মৃন্ময়দের বাড়ি। ছেলের কৃতিত্বে আনন্দে মায়ের চোখে জল। ছেলেকে মিষ্টিমুখ করাতে করাতে বললেন, ‘‘ও ভাল করবে জানতাম। তবে এতটা আশা করিনি।’’

আর্থিক অনটনের মধ্যেও জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছেন মৃন্ময়। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা আর্থিক প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে বলে মনে করছেন লিপিকা। টেস্ট পরীক্ষায় মৃন্ময় পেয়েছিলেন ৩৫০। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৬০-এর আশেপাশে নম্বর হবে ভেবেছিলেন। কিন্তু ফল বেরোনোর দিন চমক অপেক্ষা করে ছিল। ঘড়ি ধরে নিয়ম করে পড়তে পছন্দ করে না মৃন্ময়। যখনই ইচ্ছে হয়, বই-খাতা বসে পড়েন। তবে টেস্টের পরে গড়ে ১০-১১ ঘণ্টা পড়তেন। সাফল্য এসেছে সেই সূত্রেই। এই ফলের যাবতীয় কৃতিত্ব অবশ্য মৃন্ময় দিতে চান স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই। অনেকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন তাঁকে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘‘মৃন্ময় খুবই ভদ্র, লাজুক স্বভাবের। আর্থিক অনটনের মধ্যে ওর এই সাফল্যে আমরা সকলে গর্বিত। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন