হতাশ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা 

বনগাঁ, বসিরহাটে অবশ্য শুক্রবার সকাল থেকে কার্যত ফাঁকাই ছিল সোনার দোকানগুলি। সন্ধ্যার পর কিছু বিক্রিবাটা হয়। বিক্রি যা হয়েছে সবই বড় দোকান, শোরুমগুলিতে। হতাশ ছোট ব্যবসায়ীরা। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪০
Share:

সর্বত্র চোখে পড়ল না কেনাবেচার এই পরিচিত দৃশ্য। ছবি: নির্মল বসু

ধনতেরসের দিন প্রত্যাশামতো বিক্রি হল না দুই জেলার অধিকাংশ সোনার দোকানে। একদিকে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, তার উপরে হঠাৎ করেই সোনার দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়া— এই দুইয়ে মিলে এ বার ধনতেরাসে সোনার বাজার বেশ মন্দা বলে জানাচ্ছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেকেই। পাশাপাশি টানা বৃষ্টিও বিক্রি কমের কারণ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

Advertisement

ধনতেরসে সোনা কেনা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। বহু মানুষ ঐতিহ্য মেনে এ দিন সোনা কেনেন। তাই ছোট বড় সোনার দোকানগুলিতে দিন ভর উপচে পড়ে ভিড়। বনগাঁ, বসিরহাটে অবশ্য শুক্রবার সকাল থেকে কার্যত ফাঁকাই ছিল সোনার দোকানগুলি। সন্ধ্যার পর কিছু বিক্রিবাটা হয়। বিক্রি যা হয়েছে সবই বড় দোকান, শোরুমগুলিতে। হতাশ ছোট ব্যবসায়ীরা।

বসিরহাট ও বনগাঁ মহকুমা মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক সোনার দোকান আছে। যুক্ত রয়েছেন কয়েক হাজার অলঙ্কার শিল্পী। ধনতেরসের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তাঁদের অধিকাংশই। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট বড় প্রতিটি দোকানেই এ সময়ে ভাল ব্যবসা হয়। তবে এ বার ছবিটা ছিল আলাদা। অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সঙ্ঘের বসিরহাট শাখার সম্পাদক শান্তনু দে বলেন, ‘‘গত বারের তুলনায় এ বছরে এক লাফে সোনার দাম প্রতি ভরি ৭-৮ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে। ফলে ক্রেতারা অনেকেই মুখ ফিরিয়েছেন। ছোট ব্যবসায়ীদের উপরে এর বড় প্রভাব পড়েছে। কেবল ধনতেরসের দিন নয়, আগে দুর্গাপুজোয় যেমন অলঙ্কার কেনার হিড়িক লক্ষ করা যেত, এ বার তেমনটাও দেখা যায়নি।’’

Advertisement

স্বর্ণ ব্যবসায়ী শম্ভু মল্লিক, দেবাশিস চৌধুরী, কল্যাণকুমার তারনরা বলেন, ‘‘মানুষের মনে সোনার আকর্ষণ কমেনি। তবে হাতে নগদ টাকা কমেছে। ফলে অলঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে টান পড়েছে। তার উপরে সোনার দামও বেড়েছে। বছরে দু’লক্ষ টাকার বেশি সোনা কিনলে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হচ্ছে। এর ফলেও মানুষের মনে অলঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’’

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের মধ্যে বছর কয়েক আগেও ধনতেরস নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না। তবে কয়েক বছর হল এই সময়টাই অনেকেই সোনা কিনছেন। তবে এ বছর বিক্রি কম সেখানেও। হিঙ্গলগঞ্জের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার সোনার দামও বেশি। ফলে ইচ্ছা থাকলেও গ্রামের মানুষ অনেকেই সোনা কিনতে পারছেন না। এ বার তাই বিক্রি বেশ কম।’’

ডায়মন্ড হারবারেও এ বার সোনা কেনাবেচা একেবারে তলানিতে। শহর এলাকায় ৪৪টি ছোট-বড় সোনার দোকান রয়েছে। তাদের অধিকাংশই এ দিন সকাল থেকে প্রায় ফাঁকাই ছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরেও এই দিনে যথেষ্ট বিক্রি হয়েছিল। ডায়মন্ড হারবার অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সঙ্ঘের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার সোনা বিক্রি প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট এর প্রধান কারণ। তা ছাড়া, আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা তেমন ছাড় দিতে পারছি না বলেও মানুষ আসছেন না বলে মনে হয়।’’ জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত এলাকার এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ভ্রমর মোদক বলেন, ‘‘সোনার দাম এবার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ফলে বিক্রি অনেকটাই কম। অনেকেই ধনতেরসে সোনা কেনার নিয়ম পালন করতে ছোটখাটো কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্যান্য বারের মতো বিক্রি হচ্ছে না।’’

তথ্য সহায়তা: সীমান্ত মৈত্র, নির্মল বসু, দিলীপ নস্কর, সমীরণ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন