অচিরেই খুলবে সেতু, খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা

সরাসরি কাকদ্বীপ বা কলকাতায় যেতে পারবেন তেমনই বকখালি পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়াও পর্যটকদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নামখানা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০১:২৬
Share:

উদ্বোধনের-অপেক্ষায়: নামখানা সেতু। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতুর কাজ প্রায় শেষের মুখে। নামখানা ও নারায়ণপুরকে জুড়বে এই সেতু। এর ফলে একদিকে যেমন নামখানাবাসী সড়ক পথে সরাসরি কাকদ্বীপ বা কলকাতায় যেতে পারবেন তেমনই বকখালি পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়াও পর্যটকদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে।

Advertisement

কাকদ্বীপ মহকুমায় নামখানা ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বাস। তাঁদের কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতা যেতে হলে নৌকোয় হাতানিয়া-দোয়ানিয়া পেরোতে হয়। বেশি রাতে বা ভাটার সময়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হলে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাঁদের। রাতবিরেতে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে যাওয়াও এ পথে কঠিন।

এই অঞ্চলে মূলত কৃষিজীবী মানুষেরই বসবাস। উৎপাদিত শস্য বা আনাজ নিয়ে তাঁদের নদী পেরিয়ে কাকদ্বীপ বা অন্যত্র পাইকারি বাজারে যেতে হয়। ফসল নিয়ে নিয়মিত নদী পার করা বেশ ঝক্কি তাঁদের কাছে। মাছের বন্দর হয়েছে বকখালিতে। মাছের মরসুমে মাছ নিয়ে অন্য পারের বড় বাজারগুলিতে যাওয়াটাও মৎস্যজীবীদের পক্ষে বেশ কঠিন। সেতু হলে ইলিশ-বোঝাই গাড়ি সরাসরি নদী পেরিয়ে চলে আসতে পারবে ডায়মন্ড হারবারে মাছের পাইকারি বাজার নগেন্দ্রে বাজারে।

Advertisement

এ সব নানা কারণে বহু বছর ধরেই নামখানাবাসীর এই সেতু নির্মাণের দাবি ছিল। প্রতিটি ভোটের সময়ে সব দলের প্রার্থীদের কাছেই এলাকার ভোটাররা সেতুর দাবি তুলতেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীমন্ত মালি বলেন, ‘‘সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এটি চালু হওয়ার পরে নামখানা ব্লকের সমস্ত মানুষ উপকৃত হবেন।’’

ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টালে বকখালির সমুদ্র সৈকত-লাগোয়া পর্যটনকেন্দ্রে প্রায় ৭০টি হোটেল ও লজ রয়েছে। সেতু উদ্বোধনের অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও। নদীতে ভাটা চললে ভেসেল বন্ধ থাকে। ফলে পর্যটকদের সময় নষ্ট হত। গাড়ির পার করার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই বিরক্ত হতেন। এই সমস্যার কারণেই বকখালি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা ইদানীং কমছিল। হোটেল ব্যবসায়ীদের লোকসানের বহরও বাড়ছিল। হাতানিয়া-দোয়ানিয়ার উপরে সেতু হলে যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। ফলে হাল ফিরবে বকখালির পর্যটন কেন্দ্রের, এমনই আশা ব্যবসায়ীদের। সেতু চালু হলে কলকাতা থেকে বকখালি পৌঁছতে সময় অর্ধেকেরও কম লাগবে বলে আশা।

‘ফ্রেজারগঞ্জ হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এত দিন পর্যটকেরা গাড়িতে এসে ভেসেলে নদী পারপার করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তেন। এ বার থেকে সেই সমস্যা থাকছে না। আশা করি, পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার মানুষের চাহিদা মেটাতে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ত ও সড়ক দফতর থেকে ওই সেতু নির্মাণের জন্য ২২৫ কোটি টাকার অনুমোদন হয়। অনুমোদনের পরের বছরই প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা ও ২৪ ফুট চওড়া ওই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাঝে কয়েকটি দোকান ও বাড়ির মালিকের সঙ্গে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষের গোলমালে সেতুর কাজ বেশ কয়েক মাস বন্ধ হয়ে পড়েছিল। ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকেই টানা কাজ চলছে। সেতুর দু’পাশে রেলিং ঘেরা প্রায় ৪ ফুট চওড়া ফুটপাত তৈরির কাজও শেষের পথে। মূলত বাকি রঙের কাজ। সেতুর দু’দিকে সার দিয়ে বসানো হয়েছে শ’খানেক বিদ্যুৎতের খুঁটি।

কবে হবে উদ্বোধন?

সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘নামখানাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেতু নির্মাণের মূল কাজ প্রায় শেষ। নির্বাচন বিধি না আরোপ হলে মার্চের মধ্যেই সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন